নারী শিক্ষা রচনা

নারী শিক্ষা রচনা

ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, কাউকে পিছনে ফেলে রাখার অর্থ সকলে মিলেই পিছিয়ে থাকা। নারীরা সমাজের একটা বড়াে অংশ। হয়তাে বা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই। তাদের পশ্চাতে ফেলে রাখলে সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। বর্তমানে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রধানত পুরুষের হাতে। নারীর উপযুক্ত স্থান আজও সুনির্দিষ্ট হয়নি।
নারীশিক্ষার সূত্র: প্রাচীন ভারতে পুরুষের সম-মর্যাদায় অধিষ্ঠিতা ছিলেন নারী- তারা একই ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতেন। ব্ৰহ্মচর্য আশ্রমে পুরুষের সঙ্গে একই নিয়মে তারা শিক্ষা পেতেন। পুরুষের সঙ্গে সমান অধিকার নিয়ে তারা বিতর্ক সভায় যােগ দিতেন। বেদের সূক্ত রচনায়ও নারীদের নাম পাওয়া যায়। আবার গৃহকত্রী রূপে তারাই ছিলেন গৃহের প্রধান। তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতাে গৃহস্থের জীবন। মৈত্রেয়ী, গার্গী, অরুন্ধতী, খনা, লীলাবতী প্রভৃতি মহত্বে-পাণ্ডিত্যে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। নারী-হৃদয়ের স্নেহ-প্রীতি সংসারকে এক অখণ্ড ঐক্যে বিধৃত করে রাখত। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, যে, নারী যদি সম্পূর্ণ পুরুষ হয়ে ওঠে তবে সমাজ-সভ্যতার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। নারীচিত্তে কোমলতা স্নেহপ্রীতি বৃদ্ধির উপযােগী শিক্ষাই দিতে হবে তাকে।
মধ্য ও আধুনিক যুগে: মধ্যযুগে অশিক্ষার অন্ধকার নারীর মর্যাদাকে ভূলুষ্ঠিত করেছিল। বহুদিন সেই অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে নারীকে অনেক অসম্মান সহ্য করতে হয়েছে, তাকে শিক্ষিত করার চেষ্টা সে-সময় অপরাধ বলে গণ্য হতাে। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীতে নবযুগের ইউরােপীয় আলাে বিস্তারিত হবার পর একদল চিন্তাবিদ নারীশিক্ষার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেন। নারীর বিশিষ্টতা রক্ষার উপযােগী শিক্ষা দিতে পারলে যে সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে একথা মনে রাখা প্রয়ােজন।
কুসংস্কার মুক্তি ও বিশ্ববােধ: জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পৃথিবীর অগ্রগতির কথা। জানার অধিকার নারী সমাজের অবশ্যই আছে। জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়ােগ মানব জাতির অবশ্য কর্তব্য। নারীর ক্ষেত্রে তা অধিকতর প্রয়ােজন। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে নারীকে কুসংস্কার মুক্তির শিক্ষা দিতে হবে। নারীর মনকে বিশ্ববােধে উদ্দীপ্ত করলে— পরিচ্ছন্ন করবে তার চিত্তকে।
নারী শিক্ষার বিশিষ্টতা: সৃষ্টির আদি থেকেই পুরুষের মন বহির্মুখী—তার কর্মক্ষেত্র দিগন্তপ্রসারী। কিন্তু নারীর মন সর্বকালেই অন্তর্মুখী। নারীশিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণকালে তার এই স্বভাবটির কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে যুক্ত থেকেই বাইরের করণীয় কর্মের দায়িত্ব পালন করেও তাকে গৃহের কী হয়ে ওঠার শিক্ষাটিও অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। নারীর দায়-দায়িত্ব তাই পুরুষ অপেক্ষাও অধিক।
উপসংহারঃ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নারীর চাকুরী গ্রহণ অপরিহার্য হতে পারে কিন্তু যেখানে অসংখ্য যুবক বেকার সেখানে নারীর দল বেঁধে অকারণে পুরুষ হয়ে ওঠার কী প্রয়ােজন? নারীত্বকে পদদলিত করা নারীর শিক্ষা নয়। মানবের জাগ্রত করতে পারে নারী আর এই মানবতার জাগরণই জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা। কোমল অন্তরের জন্যই নারী সন্তানের প্রথম উপযুক্ত শিক্ষাদাত্রী হতে পারেন। সর্বত্র শিশু শিক্ষার দায়- দায়িত্ব নারীর হাতেই তাই তুলে দেওয়া কর্তব্য।

এই প্রবন্ধ অনুসরণে লেখা যায়ঃ
সমাজে নারীর স্থান
সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা
নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা,‌ 
নারীজগৎঃ সেকাল ও একাল।

আরো পড়ুন-
1. বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা
2. তোমার প্রিয় ঋতু
3. বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url