প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ রচনা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা
ভূমিকা
মানুষ আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে অনেক প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করে আবিষ্কার করেছে প্রাকৃতিক রহস্যের বহু সূত্র। তবু এখনও মানুষ মাঝে মাঝে প্রকৃতির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। প্রকৃতি যখন রুষ্ট হয়ে ওঠে তখন সেই রোষ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষ ছটফট করতে থাকে। কেবল সাধারণ মানুষ নয়, দুর্যোগের সঙ্গে লড়াইয়ে ছাত্রদেরও অনেকখানি ভূমিকা রয়েছে। তারা তরুণ, তারা বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী, কবি সুকান্তের ভাষায় “এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে”। তাই এ ব্যবস্থায় তাদের সফলতা হাতের মুঠোয়।
নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ
প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলতে ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়, দাবানল প্রভৃতিকে বোঝায়। মানুষের জীবনে কখন দুর্ঘটনা ঘটে তা কেউ বলতে পারে না, প্রকৃতির নিজস্ব মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই জনজীবন সমূহ সর্বনাশের মুখোমুখি হয়। সারা বছরই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কোনো না কোনো বিপর্যয় ঘটে থাকে। দীর্ঘদিনের একটু একটু প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা জনজীবন মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যায়।
সাম্প্রতিককালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি
যে-কোনো দুর্যোগই মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পথ রোধ করে। দুর্যোগ ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে তার ফল হয় মারাত্মক। অতিবর্ষণে বা বন্যায় মাঠের পর মাঠ খেতের পর খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়, ধুয়ে মুছে যায় জনপদ। প্রচণ্ড ঝড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। ভূমিকম্প মাত্রা ছাড়ালে শহর পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। দৃষ্টান্ত হিসাবে ২০০১ সালে গুজরাটে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ভূমিকম্পের দিনটির কথা স্মরণ করা যায়, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল বহুতল বাড়ি। শুধু তাই নয়, ১৯৯৩ সালে লাটুর যেভাবে কেঁপে উঠেছিল, যেভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল উত্তর কাশী, এবং ২০০৬ সালে ভূমিকম্পের প্রকোপে ভূগর্ভে তলিয়ে গেছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর। এই ভয়াল ভূমিকম্পের ফলে কোথাও মৃত্যের সংখ্যা ছাড়িয়েছে হাজার আবার কোথাও বা লক্ষাধিক। এখানেই শেষ নয় ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় দানবরূপী সুনামির আবির্ভাবে তছনছ হয়ে গেছে সেখানকার জনজীবন। যার প্রভাব ভারত ও শ্রীলংকাতেও পড়েছে। সুমাত্রায় প্রাণ হারিয়েছে ৮০,০০০ এর বেশি মানুষ আর ভারতে এর সংখ্যা ১,৫০,০০০ এরও বেশি। বাংলা দেশের উপর দু-দুবার যে ঝড়ের তাণ্ডবলীলা চলল তা অবর্ণনীয়, সিডার আর নার্গিসের প্রকোপে থমকে গিয়েছিল সেখানকার জনজীবন, এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫,০০০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘর ছাড়া হয়েছেন আরও অগণিত মানুষ।
ছাত্রসমাজের দায়িত্ব
পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভাব নেই। কোথাও খনি ধসে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, কোথাও ভূ-গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে গোটা জনপদ। দেশের ও দশের যে কোনো সমস্যার সমাধানে ছাত্রসমাজের একটা বড়ো দায়িত্ব থাকে। কেবল অধ্যয়ন নয়, তার বাইরেও ছাত্রদের অনেক বিষয়ে যুক্ত হওয়া দরকার, প্রকৃতি যখন বিরূপ হয়ে উঠে শত শত মানুষকে বিপন্ন করে তোলে, তখন সেই চরম দুর্দিনে ছাত্রসমাজই হয়ে উঠতে পারে পরম সহায়, তারাই পারে দুর্গতদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে।
ছাত্রসমাজের সক্রিয় ভূমিকা
ছাত্রসমাজ জাতির সর্বাপেক্ষা বলিষ্ঠ অংশ। এদের দেহমন নবীন প্রাণশক্তির উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ। দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষ যখন নিজেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাটুকু করতে অসমর্থ হয় সেই সময় ছাত্ররাই উদ্ধারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দুর্গতের সাহায্য করে। দুর্ঘটনাপীড়িত স্থানে সামরিক বাহিনী আসার অপেক্ষা না করেই ছাত্রসমাজ শুরু করে দেয় উদ্ধার কার্য তাতে কিছু মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে তারা সফল হয়। দুর্যোগে খাদ্য ও পানীয়ের সংকট দেখা দিলে তারা খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটমোচনের জন্য তৎপর হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সামরিক বাহিনী প্রভৃতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া কিংবা পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করে সক্রিয়ভাবে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা
ছাত্র শক্তি একটি বৃহৎ সামাজিক শক্তি। এই শক্তিকে যদি বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে লাগানো যায়, তাহলে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত। মানুষকে মানুষের মতো বাঁচতে হলে চাই আদর্শ সমাজ। আর ছাত্রছাত্রীরা সচেষ্ট হলে সেই আদর্শ সমাজ গড়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিককালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের স্বীকার দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে ছাত্রসমাজকে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিতে দেখা গেছে, ওড়িশার সুপার সাইক্লোনে পীড়িত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্ররা। সাম্প্রতিককালে বহু NGO সংস্থা দুর্গত মানুষের সহায়তার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা করেছে কিন্তু তাতে সমগ্র ছাত্রসমাজ প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে না, তাই সমগ্র ছাত্রসমাজকে প্রশিক্ষণ দানের জন্য বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন কোর্স চালু করা উচিত। যদিও কিছু বিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কোর্স শুরু করে তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করায় ব্রতী হয়েছেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যদি এই সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া যায় তবেই আমরা পারব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে তাকে জয় করতে। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের মাধ্যমে এন.সি.সি. স্কাউট, গার্লগাইড প্রভৃতি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আর্তসেবায় নিজেদের নিয়োগ করতে হবে।
উপসংহার
পৃথিবীতে সমস্যা যেমন আছে, তেমনি তার সমাধানের জন্য মানুষের তৎপরতাও আছে, শুধু দুর্যোগপীড়িত আর্ত মানুষের সহায়তা করলেই চলবে না, করতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতিরোধের ব্যবস্থা। প্রশাসনের উপর সকল দায়িত্ব চাপিয়ে না দিয়ে প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে এবং যে-কোনো রকম শুভ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে তা বাস্তবায়িত করতে হবে।