দুর্গাপূজা রচনা

দুর্গাপূজা রচনা

ভূমিকা

দুর্গাপূজা বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অতি প্রিয় উৎসব। এই উৎসবটি বাঙালি অতি আড়ম্বর এবং আন্তরিকতার সঙ্গে করে থাকে। এই উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব।

পৌরাণিক পটভূমি

শোনা যায় প্রাচীনকালে সুরথ নামে এক রাজা বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেছিলেন। সেজন্য এই পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। তবে রামচন্দ্র রাবণ বধ করার জন্য শরৎকালে এই পূজা করেছিলেন। তাই অনেকে এই পুজার সময়কে অকালবোধন বলে। আমাদের দেশে এই পূজা শারদীয়া পূজা নামেই পরিচিত।

পূজার পরিবেশ 

শরৎকালে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। আকাশে বাতাসে মায়ের আগমনী গানের সুর শোনা যায়। চারদিকে উৎসবের সাড়া পড়ে যায়। প্রবাসী ঘরে ফেরে। দোকানপাটে কেনাবেচা আরম্ভ হয়। বাঙালির কাছে এই উৎসবের সূচনা খুবই আনন্দের। এমনি আনন্দময় পরিবেশে বাঙালির দুর্গাপূজা আরম্ভ হয়।

প্রতিমার বর্ণনা

দেবী দুর্গা দশভুজা, তাঁর পদতলে মহিষাসুরকে বুকে ত্রিশূলবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। বামে দেবী সরস্বতী এবং দক্ষিণে দেবী লক্ষ্মী। ডাইনে ও বামে সিদ্ধিদাতা গণেশ ও কার্তিক। গণেশের পাশে থাকে কলা বউ। দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী। দেবী মানুষের দুর্গতি নাশ করেন বলে তাঁর নাম দুর্গা দুর্গতিনাশিনী।

পূজার দিনগুলি

দেবী দুর্গার বোধন হয় ষষ্ঠীর দিন। তারপর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী—তিন দিন পূজার নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। নবমীর দিন পুজা মণ্ডপে বলিদান হয়। তবে আজকাল আর পশুবলি খুব বেশি হয় না। তার পরিবর্তে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। পূজার চারদিন আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই খুব আমোদ আহ্লাদ করে। ঢাক ঢোল কাঁসরের শব্দে এই চারদিন মানুষের মন আনন্দে ভরে থাকে। এত আনন্দ বিজয়ার দিন ম্লান হয়ে আসে। এদিন শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা নদীতে অথবা পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়।

উৎসব 

বাঙালির কাছে এই উৎসব খুব আনন্দের। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাঙালি অতিথিসেবা করে অথবা অনেক আনন্দ অনুষ্ঠান করে। আজকাল অনুষ্ঠানের অনেক বিকৃত দিক হয়ে গেছে। মাইকের চিৎকার উৎসবের অনেকখানি গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। তাছাড়া উৎসবের নামে আজকাল নানা অনাচার চলে। মনে হয় উৎসবের সেই প্রাণের দিকটি ক্রমশ কমে আসছে।

উপসংহার

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কবিরা অনেক কবিতা রচনা করেছেন। নবমী ও দশমী রাত্রিকে উপলক্ষ করে কমলাকান্ত ও রামপ্রসাদ অনেক গান রচনা করেছেন। দেবী দুর্গা যেন আমাদের ঘরের কেউ। এই পূজার মধ্যে আমাদের পারিবারিক জীবনের ছবি ফুটে ওঠে। তাই শত দীনতার মধ্যেও বাঙালি তার এই প্রাণের উৎসব ঠিকমত প্রতিপালিত করে। সেজন্য দুর্গাপূজা আমাদের জাতীয় উৎসব।

এই প্রবন্ধের সাহায্যে লেখা যায় :
1. বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব
2. একটি জাতীয় উৎসব
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url