পদার্থ ও শক্তি (Matter and Energy)

পদার্থ ও শক্তি (Matter and Energy)

চিত্র: পদার্থ ও শক্তি
১.ভর(Mass) কি?
উঃ কোন বস্তুতে মোট যে পরিমাণ জড় পদার্থ থাকে, তাকে ঐ বস্তুর ভর বলে। 
বস্তুর ভর সাধারণত সাধারণ তুলার সাহায্যে মাপা হয়। ভর একটি স্কেলার রাশি। এস.আই পদ্ধতিতে ভরের একক কিলোগ্রাম এবং সি.জি.এস পদ্ধতিতে ভরের একক গ্রাম
২. অভিকর্ষ এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে?
উঃ বিজ্ঞানী নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে, বিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তু পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে, এই আকর্ষণ মহাকর্ষ বলে। অভিকর্ষ বলতে পৃথিবীর মহাকর্ষ বোঝায়।
অভিকর্ষ(Gravity): পৃথিবীর ওপরে বা পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা প্রত্যেক বস্তুকে পৃথিবী নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর এই আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষ বলে। 
এই অভিকর্ষের জন্যই কোনাে বস্তুকে উপরের দিকে ছুঁড়ে দিলে বস্তুটি আবার পৃথিবী-পৃষ্ঠে ফিরে আসে।

অভিকর্ষর্জ ত্বরণ (Acceleration due to Gravity): অভিকর্ষের ক্রিয়ায় অবাধে ভূ-পৃষ্ঠে পতনশীল বস্তুর সময়ের সাপেক্ষে বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। 
একে ‘g’ অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠে ‘g'-এর গড় মান হল : এস. আই. পদ্ধতিতে 9.81 মিটার/সেকেন্ড এবং সি. জি. এস. পদ্ধতিতে 981 সেমি/সেকেন্ড।
বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ভর অপরিবর্তিত থাকলেও অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তিত হয় বিভিন্ন ওজন বিভিন্ন হয়।
যেমন-১.ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান তত কমে যায়
২. ভূপৃষ্ঠ থেকে যত নিচে যাওয়া যায় অভিকর্ষজ  ত্বরণের মান তত কমে।তাই কোন বস্তুকে ভূপৃষ্ঠ থেকে খনিগর্ভে নিয়ে গেলে ঐ বস্তুর ওজন কমে যায়।পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান শূন্য হয় তাই পৃথিবীর কেন্দ্রে কোন বস্তুর ভার শূন্য হয়।
৩.পৃথিবী থেকে কোন বস্তুকে অন্য গ্রহে, উপগ্রহ বা নক্ষত্র নিয়ে গেলে বস্তুর ওজনের পরিবর্তন ঘটে। যেমন-1.বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের থেকে বেশি তাই কোন বস্তুকে বৃহস্পতি গ্রহে নিয়ে গেলে তার ওজন বাড়বে। 2. চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রায় 1/6 ভাগ।ফলে কোন বস্তুকে চাঁদে নিয়ে গেলে ঐ বস্তুর ওজন হয় পৃথিবী বস্তুটির ওজনের প্রায় 6 ভাগের 1 ভাগ।

৩. ভার বা ওজন (Weight) কি?
উঃ ভার বা ওজন ( Weight): যে বল দ্বারা পৃথিবী কোনাে বস্তুকে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, সেই বলকে ঐ বস্তুর ভার বা ওজন বলে। 
ওজনের মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে। সুতরাং, ওজন একটি ভেক্টর রাশি। স্প্রিং তুলায় বস্তুর ভার বা ওজন মাপা হয়।
৪. ভরের নিত্যতার সূত্র বিবৃত করো।
উঃ ভরের নিত্যতা সূত্র সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ার।
ভরের নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (Law of conservation of Mass) হল : পদার্থের ভর
অবিনাশী। একে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। যেকোনাে ভৌত বা রাসায়নিক পরিবর্তনে পদার্থের
রূপান্তর ঘটে মাত্র, পরিবর্তনের আগে ও পরে পদার্থের মােট ভর অপরিবর্তিত থাকে। এই বিশ্বে
মােট ভরের পরিমাণ ধ্রুবক।
৫. শক্তির নিত্যতা সূত্র বিবৃত করো।
উঃ শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (Law of conservation of Energy) : শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। একে কেবলমাত্র এক রপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত করা যায়। বিশ্বের মােট শক্তির পরিমাণ ধ্রুবক।
৬. ভর ও শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র বিবৃত করো?
উঃ ভর ও শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (Principle of conservation of mass and energy):
বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব অনুসারে উচ্চশক্তির প্রক্রিয়াতে ভর শক্তিতে এবং শক্তি ভরে রূপান্তরিত হতে পারে। এই রূপান্তরের সম্পর্কটি।
হল : m ভরের পদার্থকে সম্পূর্ণ বিনাশ করলে যদি E পরিমাণ শক্তি সৃষ্টি হয়, তবে E = mc2, যেখানে c শূন্য মাধ্যমে আলাের বেগ। বিপরীতভাবে বলা যায়—E পরিমাণ শক্তি রূপান্তরিত হলে m পরিমাণ ভরের পদার্থের সৃষ্টি হয়।

শক্তি ও ভরের এই তুল্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ভর ও শক্তিকে আলাদাভাবে নিত্য রাশি না ধরে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে—ভর শক্তিতে এবং শক্তি ভরে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু যেকোনাে প্রক্রিয়ার আগে ও পরে ভর ও শক্তির মােট পরিমাণ সর্বদা সমান থাকে। বিশ্বের শক্তি ও ভরের মােট পরিমাণ ধুবক। এই সূত্রটিকে ভর ও শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র বলে।
৭.নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton's Law of Gravitation) বিবৃতি করো।
উঃ বিবৃতি: মহাবিশ্বের যে-কোনাে দুটি বস্তুকণা তাদের সংযােজক সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণা দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

মনে করা যাক, m1 এবং m2 ভরের দুটি বস্তুকণার মধ্যবর্তী দূরত্ব r । কণা দুটির মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বল F হলে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুযায়ী,
 F = G. m1m2/r²
এখানে G-কে সর্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক (universal gravitational constant) বা সংক্ষেপে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক
(gravitational constant) বলা হয়।
৮.মহাকর্ষীয় ধ্রুবক কি ও তার একক ও মাত্রা উল্লেখ করো।
উঃ নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুযায়ী,
 F = G. m1m2/r²
এখন, m = m2 = 1 এবং r = 1 বসিয়ে পাওয়া যায়, G = F
এটিই মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের সংজ্ঞা নির্দেশ করে।
সংজ্ঞা: দুটি একক ভরবিশিষ্ট বস্তুকণা একক দূরত্বের ব্যবধানে থেকে পরম্পরকে যে পরিমাণ বল দ্বারা আকর্ষণ করে তাকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলা হয়।
একক: F = G. m1m2/r² এই  সমীকরণ থেকে লেখা যায়,
G এর একক = {F এর একক× (rএর একক)²}/(m এর একক)²
সুতরাং, বিভিন্ন পদ্ধতিতে G-এর এককগুলি হল:
CGS পদ্ধতিতে: ডাইন-সেমি/গ্রাম (dyn-cm/g2)
FPS পদ্ধতিতে: পাউন্ডাল ফুট/পাউন্ড (poundal•ft2/1b2)
SI-তে: নিউটন.মি/কিগ্রা2 (Nm/kg)
মাত্রা: G এর মাত্রা = {F এর মাত্রা× (rএর মাত্রা)²}/(m এর মাত্রা)²
=MLT-²×L²/M²
৯.তাপীয় যুগ্ম কি?
উঃ একটি তামা ও একটি লোহার তারের দুই প্রান্ত জোড়া লাগিয়ে এক প্রান্ত শীতল ও অপরপ্রান্ত উত্তপ্ত করলে তার দুটির ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হয় এখানেে তাপশক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । দুটি ভিন্ন ধাতুর তারের এই ধরনের জোড়কে তাপীয়় যুগ্ম (Thermocouple) বলে।

Chapter- Matter and Energy Important MCQ

1. তাপীয়যুগ্মতে কোন শক্তি থেকে কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়?
উঃ তাপ শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
2. 1 গ্রাম পদার্থের তুল্য তাপ শক্তির পরিমাণ কত?
উঃ 9×10¹³ জুল।
3.সাধারণ তুলা যন্ত্রের বাহুর দৈর্ঘ্য অসম হলে, যদি m1 ও m2 যথাক্রমে বাম ও ডান তুলাপাত্রের বাটখারার ভর হয় তবে বস্তুর প্রকৃত ভর কত হবে?
উঃ ✓m1m2
4. সাধারণ তুলাপাত্রের ভর দুটি অসম হলে, বস্তুর প্রকৃত ভর কার সমান হবে?
উঃ ½(m1+m2)
5. ভর ও শক্তির তুল্যতার গাণিতিক রূপটি লেখ।
উঃ ভর ও শক্তির তুল্যতার গাণিতিক রূপটি হল E= mc²
6. সব শক্তির সর্বশেষ রূপটি কি?
উঃ তাপ শক্তি।
7. ভরের নিত্যতা সূত্র কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উঃ ল্যাভয়সিয়ে।
8.লাউড স্পিকারে কথা বলার সময় শব্দ শক্তি কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়?
উঃ তড়িৎ শক্তিতে।
9. শক্তি স্কেলার রাশি না ভেক্টর রাশি?
উঃ শক্তি হল স্কেলার রাশি।
10. সূর্যের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর কত গুন?
উঃ 27
11. নবীকরণ যোগ্য শক্তির উৎস কি?
উঃ সৌরশক্তি।
12. একটি অচিরাচরিত শক্তির উদাহরণ দাও?
উঃ জৈব গ্যাস।
13. নিচের কোন স্থানে একটি বস্তুর ওজন সবচেয়ে বেশি হবে?
ক) কালিংপং     খ) শিলিগুড়ি       গ) হিমালয়    ঘ) কলকাতা
উঃ কলকাতা।
14. ভরের নিত্যতা সূত্র প্রমাণের দহন পরীক্ষা কি নামে পরিচিত?
উঃ ল্যাভয়সিয়ের।
15. সূর্যের বিকিরণের 200 কোটি ভাগের একভাগ পৃথিবীতে কি হারে আসে?
উঃ 18× 10^9 MW
16. একটি সাধারণ তুলার বাহুর দৈর্ঘ্য অসমান।দুটি পাল্লায় বস্তুটিকে চাপালে যথাক্রমে 9 গ্রাম ও 16 গ্রাম বাটখারা প্রয়োজন হয় বস্তুত প্রকৃত ভর কত?
উঃ ✓9×16 =✓144 = 12 গ্রাম।

শ্রেণী- নবম শ্রেণী
অধ্যায়- পদার্থ ও শক্তি

(i) সকল প্রকার শক্তিই শেষপর্যন্ত কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ?
উঃ তাপ শক্তিতে পরিণত হয়।
 (ii) ভর ও ওজন কোনটি কোন ধরনের তুলাযন্ত্রে মাপা হয় ?
উঃ ভর মাপা হয় সাধারণ তোলার সাহায্যে এবং ওজন বা ভার মাপা হয় স্প্রিং তুলায় সাহায্যে
(iii) চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের কত অংশ?
উঃ চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রায় 1/6 ভাগ।
(iv) কোথায় বস্তুর ওজন শূন্য হবে? 
উঃ পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর ভার বা ওজন শূন্য হয়।
(v) তড়িৎ শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি ও রাসায়নিক শক্তি থেকে শব্দ শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ দাও।
উঃ1.বৈদ্যুতিক পাখা বা বিদ্যুৎ চালিত গমকলে তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
    2.পটকা ফাটালে রাসায়নিক শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
 (vi) শব্দ শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের উদাহরণ দাও। | মাধ্যমিক 2003] 
উঃ প্রচন্ড শব্দের কম্পনে জানলার কাচ ভেঙে যায় শব্দ শক্তির যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তরের ফলে এরূপ ঘটে।
(vii) পারমাণবিক শক্তির তড়িৎ শক্তিতে
রূপান্তরের উদাহরণ দাও। 
উঃ পারমাণবিক চুল্লিতে পরমাণু কেন্দ্রের বিভাজনের ফলে প্রচণ্ড তাপ শক্তি উৎপন্ন হওয়ার ফলে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
(viii) তাপ শক্তির যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের উদাহরণ দাও। 
উঃ পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জ্বালানি পুড়িয়ে যে তাপ পাওয়া যায় তার সাহায্যে রেলগাড়ি,
মোটরগাড়ি, এরোপ্লেন চালানো হওয়ার ফলে তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
ix) পরিবেশ দূষণ করবে না এমন দুটি অপ্রচলিত শক্তি উৎসের নাম কর। [ মাধ্যমিক 1997] 
উঃ সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি।
(x) রাসায়নিক শক্তি থেকে তড়িৎশক্তি এবং তড়িৎ শক্তি থেকে তাপ শক্তিতে রপান্তরের একটি করে উদাহরণ দাও। (মাধ্যমিক 2005] 
উঃ 1. বৈদতিক কোষে বা ব্যাটারীতে রাসায়নিক শক্তির তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
     2.বৈদ্যুতিক হিটারে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে হিটারের পরিবাহী কুণ্ডলী উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এখানে তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
(xi) কলকাতা ও দার্জিলিং-এ কোনাে বস্তুর ভর ও ওজনের কোনটি পৃথক হবে এবং কেন?
(মাধ্যমিক 2001] 
উঃ কলকাতা থেকে কোনো বস্তুকে দার্জিলিং নিয়ে গেলে বস্তুটির ওজন কম হয় কারণ ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান তত কম হয়।
(xii) দৈনন্দিন জীবনে শক্তি সংরক্ষণের একটি উপায় উল্লেখ করাে। [ মাধ্যমিক 2004]
উঃ সঞ্চয়ক কোষ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url