জৈব রসায়ন (Organic Chemistry)

Organic Chemistry (জৈব রসায়ন)

Chapter : Organic Chemistry (জৈব রসায়ন)

Collection: Many competitive book and CBSE and WBBSE board
জৈব রসায়নের বিষয় সংক্ষেপ
ইউরিয়া নামক জৈব যৌগটি প্রথম পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত হয়েছিল।
প্রােটিন, কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, অ্যামাইনাে অ্যাসিড প্রভৃতি জীবজ অণু ।।
গ্লুকোজ, ফুক্টোজ, স্টার্চ, সেলুলােজ প্রভৃতি হ'ল কার্বোহাইড্রেট।
∆ জৈব যৌগে কার্বন পরমাণু থাকবেই।
∆ অ্যামাইনাে অ্যাসিডে -COOH এবং-NH2 গ্রুপ বর্তমান।
কোলাজেন, হিমােগ্লোবিন, হরমােন প্রভৃতি হ'ল প্রােটিন।
∆ D.N.A. হ’ল ডি-অক্সিরাইবাে নিউক্লিক অ্যাসিড।
∆ R.N.A. হ’ল রাইবাে নিউক্লিক অ্যাসিড
∆ নিউক্লিক অ্যাসিডের মনােমার হ’ল নিউক্লিওটাইড
∆ নিউক্লিওটাইডে নাইট্রোজেন ঘটিত হেটারােসাইক্লিক ক্ষারক, সুগার ও ফসফেট গ্রুপ থাকে।
∆ নিউক্লিওটাইড হ’ল নিউক্লিওসাইডের ফসফেট এস্টার।
মিথেন একটি সম্পৃক্ত জৈব যৌগ ।
ইথিলীন এবং অ্যাসিটিলিন হ'ল অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ ।
∆ বেঞ্জিন হ’ল অ্যারােমেটিক জৈব যৌগ
∆ টেফনল-এর মনোমার হ’ল টেট্রাফ্লুরােইথিলীন
Important Question and Answer for Competitive Exam

জৈব রসায়নের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

1.কোন জৈব যৌগটি প্রথম পরীক্ষাগারে প্রস্তুত করা হয় ?
উঃ ইউরিয়া।
2.ইউরিয়ার সংকেত কি ?
উঃ CO(NH2)2
3.স্তন্যপায়ী প্রাণির মূত্রে কোন পদার্থটি পাওয়া যায় ?
উঃ ইউরিয়া।
4. সমস্ত জৈব যৌগের মূল উপাদানটি কি ?
উঃ কার্বন।
5. পরীক্ষাগারে কোন যৌগ থেকে ইউরিয়া প্রস্তুত করা হয়েছিল ?
উঃ অ্যামােনিয়াম সায়ানেট।
6. জীবদেহে কে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে ?
উঃ উৎসেচক
৭. ম্যালেরিয়া রােগ নিরাময় করতে কি ব্যবহার করা হয়?
উঃ কুইনাইন।
৪. টাইফয়েড নিরাময় করতে কি ব্যবহার করা হয়?
উঃ ক্লোরােমাইসিটিন
9. কার্বোহাইড্রেট অণুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন অণু কি অনুপাতে থাকে ?
উঃ 2 : 1
10. কার্বোহাইড্রেট প্রধানত কয় প্রকার ?
উঃ 3 প্রকার
11. দশের বেশি মনােস্যাকারাইড যুক্ত হয়ে যে শর্করা গঠন হয় তাকে কি বলে ?
উঃ অলিগােস্যাকারাইড।
12. গ্লুকোজ কোন প্রকার কার্বোহাইড্রেট ?
উঃ মনােস্যাকারাইড ।
13. প্রােটিনের অণু কী দিয়ে গঠিত হয় ?
উঃ অ্যামিনাে অ্যাসিড ।
14. অ্যামিনাে অ্যাসিড অণুতে কোন কোন কার্যকরীমূলক থাকে ?
উঃ -NH2, -CO2H
15. নিউক্লিক অ্যাসিড কয় প্রকার ?
উঃ 2 প্রকার
16. নিউক্লিক অ্যাসিডের একককে বলা হয় ?
উঃ নিউক্লিওটাইড।
17. DNA ও RNA কোন অ্যাসিড ?
উঃ নিউক্লিক অ্যাসিড
18. DNA-এর দ্বিতন্ত্রী মডেল (Double helix) কোন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম স্থাপন করেন ?
উঃ ওয়াটসন ও ক্লিক।
19. DNA-এর কাজ কি ?
উঃ 1.জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহন করা
2.কোষের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা
3.প্রােটিন সংশ্লেষ করা
20. RNA কয় প্রকার ?
উঃ 2 প্রকার
21. কার্বন পরমাণু দ্বারা দীর্ঘ কার্বন শৃঙ্খল গঠন করার ধর্মকে কি বলা হয় ?
উঃ ক্যাটিনেশন।
22. কার্বনের তড়িৎ স্বনাত্মকতার মান কত ?
উঃ 2.5
23. সবচেয়ে সরল হাইড্রোকার্বনের সংকেত কি?
উঃ CH4
24. মার্স গ্যাস কাকে বলে ?
উঃ জলাভূমিতে গাছপালা পচে যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, ঐ গ্যাসের মিশ্রণকে মার্স গ্যাস বলা হয়।
25. মিথেনের আণবিক গুরুত্ব কত ?
উঃ 16
26. একটি অ্যারােমেটিক যৌগের উদাহরণ দাও।
উঃ বেঞ্জিন, ফেনল, ন্যাফথ্যালিন
27. একটি হেটেরােসাইক্লিক যৌগের উদাহরণ দাও।
উঃ ফিউরান, থায়োফিন, পিরিডিন
28. সমগণীয় শ্রেণি কাকে বলে ?
একই ধরণের যৌগ সমূহের আনবিক সংকেত যদি একে অপরের থেকে (-CH2-) একক দ্বারা পৃথক হয়,সেই শ্রেণিকে সমগণীয় শ্রেণি বলা হয়।
29. একটি সমগণীয় শ্রেণিতে দুটি পরপর যৌগের আনবিক গুরুত্বের পার্থক্য কত?
উঃ 14 a.m.u.
30. মিথানল, ইথানল, প্রােপানল হল কোন সমগণীয় শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত ?
উঃ অ্যালকোহল।
31. অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন কয় প্রকারের ?
উঃ 2 প্রকার
32. সম্পৃক্ত অ্যালকেন যৌগের সাধারণ সংকেত কি?
উঃ CnH2n+2
33. অলিফিন যৌগের সাধারণ সংকেত কত?
উঃ CnH2n
34. অ্যালকাইন যৌগের সাধারণ সংকেত কত?
উঃ CnH2n-2
35. অ্যালকোহল যৌগের সাধারণ সংকেত কত ?
 উঃ CnH2n+1OH
36. একটি অ্যালকেন যৌগের শেষে যদি (-CHO) কার্যকরী মূলক থাকে, যৌগটি কোন শ্রেণির ?
উঃ অ্যালডিহাইড
37. অ্যাসিটোন কি প্রকারের জৈব যৌগ?
উঃ কিটোন।
38. ফরমিক অ্যাসিডের সংকেত কি? এবং ফরমিক অ্যাসিডের অন্য নাম কি?
উঃ ফরমিক অ্যাসিডের সংকেত HCOOH
ফরমিক অ্যাসিডের অন্য নাম মিথানোইক অ্যাসিড
39. অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH)-এর আনবিক গুরুত্ব কত? অ্যাসিটিক অ্যাসিডের অন্য নাম কি ?
উঃ অ্যাসিটিক অ্যাসিডের আণবিক গুরুত্ব 60
এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিডের অন্য নাম ইথানোইক অ্যাসিড
40. অ্যাসিটিক অ্যাসিডের IUPAC নামকরণ কি?
উঃ ইথানোইক অ্যাসিড।
41. মিথেন কে আবিষ্কার করেন?
উঃ 1856 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী বার্থেলাে পরীক্ষাগারে সর্ব প্রথম কার্বন ও হাইড্রোজেন থেকে মিথেন যৌগটিতে প্রস্তুত করেন।
মিথেন হল অ্যালকেন বা প্যারাফিন সমগোত্র শ্রেণীর প্রথম যৌগ।
42. মিথেনের পর্যাপ্ত বায়ুর উপস্থিতিতে দহনের ফলে কি উৎপন্ন হয় ?
উঃ CO2 + H2O
43. কম পরিমাণ বায়ুর উপস্থিতিতে মিথেনের দহনের ফলে কি উৎপন্ন হয় ?
উঃ কার্বন ব্ল্যাক
44. একটি গ্রীনহাউস গ্রাসের নাম বল ?
উঃ মিথেন
45. ইথিলিনের রাসায়নিক সংকেত কি?
উঃ C2H4
46. প্ল্যাটিনাম অণুঘটকের উপস্থিতিতে ইথিলিন ও হাইড্রোজেন গ্যাসের বিক্রিয়ায় কি উৎপন্ন হয় ?
উঃ ইথেন।

Class - দশম শ্রেণী
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

(i) ফল পাকাতে কোন্ গ্যাস ব্যবহার করা হয়?
উঃ ইথিলিন গ্যাস।
(ii) কার্বাইড গ্যাস বাতিতে কোন্ গ্যাস জ্বলে ?
উঃ অ্যাসিটিলিন গ্যাস।
(iii) বেঞ্জিনের সংকেত কি?
উঃ C6H6
(iv) হেটেরােসাইক্লিক যৌগের সংকেত সহ উদাহরণ দাও।
উঃ হেটেরােসাইক্লিক যৌগগুলি হল ফিউরান, থায়োফিন, পিরিডিন ইত্যাদি।
ফিউরান এর সংকেত C4H4O
থায়োফিন এর সংকেত C4H4S
(vi) ঝালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় দুটি গ্যাসের নাম কী?
উঃ ঝালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় দুটি গ্যাস অক্সি অ্যাসিটিলিন গ্যাস, ও অক্সি হাইড্রোজেন গ্যাস।
(vii) অ্যালকাইনের সাধারণ সংকেত লেখ।
উঃ
(viii) জৈব ফ্যাটি অ্যাসিডের কার্যকরী মূলক কী?
উঃ 
(ix) D.N.A ও R.N.A-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উঃ D.N.A এর সম্পূর্ণ নাম ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড
R.N.A-এর সম্পূর্ণ নাম রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড
(x) জৈব যৌগগুলি তড়িৎযােজী না সমযােজী?
উঃ সমযােজী।
(xi) নীচের যৌগগুলির মধ্যে কোনটি জৈব
যৌগ? NaHCO3, CH4, CO2, CHCl3, CaC2।
উঃ CH4
(xii) পলিথিন কি থেকে উৎপন্ন হয়?
উঃ ইথিলিন
(xiii) কয়েকটি জৈবভঙ্গুর পলিমারের উদাহরণ দাও। জৈবভঙ্গুর পলিমারের ব্যবহৃত লেখ।
উঃ পলিহাইড্রক্সিবিউটারেট-বিটা হাইড্রক্সিভ্যালােরেট (PHBV), পলিগ্লাইকোলিক অ্যাসিড-পলি ল্যাকটিক অ্যাসিড (PLLA) এবং নাইলন-2-নাইলন–6। 
জৈবভঙ্গুর পলিমার গুলি ক্যাপসুল, মােড়ক, কৃত্রিম অস্থিসন্ধি তৈরিতে এবং অস্ত্রোপচারের পর কাটা স্থান জোড়বার সুতাে হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জৈব রসায়নের জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

1. ইউরিয়া কিভাবে প্রস্তুতি হয় ?
উঃ 1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভােলহার (Fredrich Wholer) সর্বপ্রথম পরীক্ষাগারে অজৈব যৌগ অ্যামােনিয়াম সায়ানেট (NH4CNO)-কে উত্তপ্ত করে জৈব যৌগ ইউরিয়া [CO(NH2)2] প্রস্তুত করেন।
NH4CNO ----তাপ--- CO(NH2)2
স্তন্যপায়ী প্রাণীর মূত্রে পাওয়া যায় জৈব যৌগটি হল ইউরিয়া। এই আবিষ্কারটি থেকে জৈব রসায়নে নবযুগের সূচনা হয়।
2. জৈব যৌগ কাকে বলে?
জৈব রসায়নের সংজ্ঞা : কার্বনের অক্সাইড, কার্বন ডাই সালফাইড, ধাতব কার্বনেট, ধাতব বাই কার্বনেট, হাইড্রোজেন সায়ানাইড ও তার লবণগুলি ছাড়া কার্বন ঘটিত অন্যান্য যৌগগুলিকে জৈব যৌগ (Organic Compounds) বলে।
3. জৈব রসায়ন বা organic chemistry কাকে বলে?
উঃ রসায়নের যে শাখায় জৈব যােগগুলির প্রস্তুতি, গঠন, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে আলােচনা করা হয়, তাকে জৈব রাসায়ন Organic Chemistry) বলে।
4. জীবন ক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভূমিকা কি ? [ Role of organic Chemistry or organic compunds in life process]
উঃ  প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশিরভাগই অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত। তাই জীবজগতের জীবন-ক্রিয়ায় জৈব যৌগ বা রসায়নের গুরুত্ব খুবই বেশি। 
জীবের জন্ম, পুষ্টি, বৃদ্ধি, বংশধারা, রক্ষণ, ক্ষয়পূরণ প্রভৃতিতে জৈব যৌগের ভূমিকা কীভাবে অংশগ্রহণ করে তা নীচে দেওয়া হল :
i. দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও গঠনে জৈব যৌগের ভূমিকা : মানব দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি, গঠন ও রােগ-প্রতিরােধের জন্য আমরা যে সব খাদ্য গ্রহণ করি তাদেরকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, এরা সবই জৈব যৌগ। যেমন :
(a) কার্বহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় পদার্থ : চাল, গম, আলু, ভুট্টা, চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি শর্করা জাতীয় পদার্থ। এসব খাদ্য দেহে রক্তের সঙ্গে মিশে পুষ্টি ও শক্তি যােগায়।
(b) স্নেহজাতীয় পদার্থ: তেল, মাখন, ঘি ইত্যাদি স্নেহজাতীয় পদার্থ। এগুলি দেহে তাপ ও শক্তি যােগায়।
(c) আমিষ বা প্রােটিন জাতীয় পদার্থ : মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি প্রাণিজ প্রােটিন এবং মুসুর, মুগ, ছােলা, সয়াবীন ইত্যাদিি উদ্ভিজ্জ প্রােটিন। এই প্রােটিন আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয়ে অ্যামাইনাে অ্যাসিড উৎপন্ন করে যা আমাদের দেহ গঠনে ও ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠনে সাহায্য করে । এছাড়া আমরা যে ভিটামিনগুলি শাকসবজির মাধ্যমে গ্রহণ করি সেগুলিও জৈব যৌগ। এই ভিটামিন আমাদের দেহের রােগ প্রতিরােধ করে দেহকে সতেজ রাখে।
ii. জীবদেহের রাসায়নিক পরিবর্তনের জৈব যৌগের ভূমিকা : জীবদেহে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনে উৎসেচক (enzyme) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উৎসেচকগুলি হল জটিল জৈব যৌগ। এরা অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।
iii. জীবদেহে হিমােগ্লোবিনে জৈব যৌগের ভূমিকা : হিমােগ্লোবিন প্রােটিন-জাতীয় জৈব পদার্থ। যেটা মেরুদণ্ডী প্রাণীদেহে অক্সিজেন বহন করে।
iv. প্রাণীর গমন ও পেশি সঞ্চালনে জৈব যৌগের ভূমিকা গুলি হল: 
প্রাণীর গমন এবং দেহের মধ্যে পেশি সঞ্চালন করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তি, এবং স্থিতিশক্তি হিসেবে অ্যাডিনােসিন ট্রাই-ফসফেট (ATP) নামক জৈব যৌগ জমা থাকে।
v. প্রাণীর জীবনধারায় ও বংশবৃদ্ধিতে জৈব যৌগের ভূমিকা: প্রাণীর জীবনধারা বা বংশবৃদ্ধি অক্ষুন্ন রাখতে ডি-অক্সিরাইবাে নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA) এবং রাইবাে নিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) সাহায্য করে। এগুলি জটিল জৈব যৌগ।
vi. হরমােন একটি জৈব পদার্থ : প্রাণীর বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমােন (Hormone) একরকমের জৈব পদার্থ, যা দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়।
vii. রােগ নিরাময়ে জৈব যৌগের ভূমিকা : নানারকম জৈব যৌগ রােগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
যেমন : ম্যালেরিয়ায় কুইনাইন, নিউমােনিয়ায় পেনিসিলিন, যক্ষ্মায় স্ট্রেপটোমাইসিন, টাইফয়েডে ক্লোরােমাইসিটিন প্রভৃতি জৈব যৌগ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্লোরােফর্ম, ইথার প্রভৃতি চেতনানাশক পদার্থ অস্ত্রোপচারে যন্ত্রণাশূন্য করেছে।
viii. মানুষের দৈনন্দিনে ব্যবহৃত নানান জৈব যৌগ : এছাড়া মানুষের দৈনন্দনে সাবান, বিভিন্ন অঙ্গরাগ ও রঞ্জক পদার্থ, কৃত্রিম সিল্ক, নাইলন, টেরিলিন প্রভৃতির আবিষ্কার জৈব রসায়নের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া পেট্রোল, কেরােসিন, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জৈব-যৌগ জ্বালানী হিসেবে সভ্যতার পরিবর্তন করছে।
5.জীবজ অণু কাকে বলে ?
জীবজ অণু (Biomolecules): সজীব কোষে সংশ্লেষিত ক্ষুদ্রঅণু (Micrormolecule) ও বৃহদঅণুকে (Macrormolecule) একত্রে জীবজ অণু বলে। 
এই বৃহদঅণু জৈব যৌগগুলি পলিমারাইজেশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।
জীবজ অণুর প্রকার ভেদ : জীবজ-অণু নানা প্রকারের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য অণুগুলি হল : কার্বোহাইড্রেট, প্রােটিননিউক্লিক অ্যাসিড
6. কার্বোহাইড্রেট কাকে বলে ? কার্বোহাইড্রেট কয় প্রকারের ?
উঃ কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত যে জৈব যৌগে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত সাধারণত জলের অনুপাতে অর্থাৎ 2 : 1 হিসেবে থাকে, তাকে কার্বোহাইড্রেট বলে। [ব্যতিক্রম: রামনােজ (C6H12O5)]। এদের সাধারণ সংকেত Cn(H2O)n;
সবুজ উদ্ভিদ দেহে সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বোহাইড্রেট তৈরি হয়।
কার্বোহাইড্রেট সাধারণত তিন প্রকারের যথা: i) মনোস্যাকারাইড, ii) অলিগোস্যাকারাইড
iii) পলিস্যাকারাইড
7. মনোস্যাকারাইড কাকে বলে ?
উঃ সব প্রকার কার্বোহাইড্রেট এর একক কে মনোস্যাকারাইড বলে। যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্যালাকটোজ।
8. পলিস্যাকারাইড কাকে বলে?
উঃ দশের বেশি মনোস্যাকারাইড পরস্পর যুক্ত হয়ে জল বিভাজনের মাধ্যমে যে শর্করা গঠন করে তাকে পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন- স্টার্চ বা শ্বেতসার, সেলুলোজ ইত্যাদি।
9. প্রোটিন কাকে বলে ? প্রোটিনের একক কি ?
উঃ সংজ্ঞা : একাধিক অ্যামিনাে অ্যাসিড পরস্পর যুক্ত হয়ে যে বৃহৎ শৃঙ্খলাকার যৌগ গঠন করে, তাকে প্রােটিন বলে। অর্থাৎ, প্রােটিন হল অ্যামিনাে অ্যাসিডের পলিমার।
অ্যামিনো অ্যাসিড প্রোটিনের একক
দেহ গঠনে প্রােটিন বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। অস্থি, পেশি, উৎসেচক, নখ, চুল, শিং, ক্ষুর প্রভৃতি প্রােটিন দিয়ে তৈরি।
10. নিউক্লিক অ্যাসিড কাকে বলে ? নিউক্লিক অ্যাসিড কয় প্রকার কি কি ?
উঃ নিউক্লিয়াসের ক্রোমােজোম ও রাইবােজোমে যে অ্যাসিড থাকে, তাকে নিউক্লিক অ্যাসিড বলে।নিউক্লিয়াসে নিউক্লিক অ্যাসিড প্রােটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওপ্রােটিন গঠন করে। 
নিউক্লিক অ্যাসিড দুই প্রকার, যথা : (i) ডি-অক্সিরাইবােনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA)
ও (ii) রাইবােনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA)
11. নিউক্লিক অ্যাসিড কি নিয়ে গঠিত ? নিউক্লিক অ্যাসিডের একক কি ?
উঃ ফসফরাস অ্যাসিড (H3PO4), একটি পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা ও N2 যুক্ত ক্ষারমূলক নিয়ে নিউক্লিক অ্যাসিড গঠিত।
নিউক্লিক অ্যাসিডের একক নিউক্লিওটাইড।
12. ক্যাটিনেশন কাকে বলে?
উঃ যে ধর্মের জন্য কার্বন পরমাণুগুলি সমযােজী বন্ধনের (এক বন্ধন,দ্বি-বন্ধন, ত্রি-বন্ধন) সাহায্যে পরস্পর যুক্ত হয়ে সুস্থিত কার্বন শৃঙ্খল গঠন করে, কার্বন পরমাণুর সেই বিশেষ ধর্মকে ক্যাটিনেশন বলে।
13. সমাবয়বতা কাকে বলে?
উঃ জৈব যৌগে একই আণবিক সংকেত যুক্ত কিন্তু ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট একাধিক যৌগ পাওয়া যায়। জৈব যৌগের এই বৈশিষ্ট্যকে সমাবয়বতা এবং যৌগগুলিকে সমাবয়ব বলে।
14. জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উঃ 

জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Organic and Inogranic Compounds):

জৈব যৌগ অজৈব যৌগ
1. প্রত্যেকটি জৈব যৌগের অণুতে কার্বন থাকবেই। 1. অজৈব যৌগগুলিতে কার্বনের মত নির্দিষ্ট কোনাে মৌলের উপস্থিতি দেখা যায় না। অজৈব যৌগ সব রকম মৌল দিয়ে গঠিত হতে পারে।
2. জৈব যৌগগুলি বেশির ভাগই সমযােজী পদার্থ। 2. অজৈব যৌগগুলি অধিকাংশই তড়িৎযােজী পদার্থ।
3. জৈব যৌগগুলাে সাধারণত জলে অদ্রাব্য; জৈব যৌগ তরলে দ্রাব্য। 3. অজৈব যৌগ সাধারণত জলে দ্রাব্য এবং জৈব তরলে অদ্রাব্য।
4. জৈব যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষাকৃত কম। 4. অজৈব যৌগগুলির গলনাঙ্কও স্ফুটনাঙ্ক জৈব যৌগের তুলনায় বেশি।
5. জৈব যৌগগুলি সাধারণত দাহ্য পদার্থ। এরা সাধারণত উদ্বায়ী পদার্থ। 5. অজৈব যৌগগুলি বেশিরভাগ দাহ্য নয় এবং এরা সাধারণত অনুদ্বায়ী পদার্থ।
6. জৈব যৌগের অণু-সংযােজন বিক্রিয়ার সাহায্যে
বেশি আণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন হয়।
6. অজৈব যৌগে অণু-সংযােজন বিক্রিয়া সাধারণত দেখা যায় না।
7. বেশিরভাগ জৈব যৌগগুলি সমযােজী হওয়ায় এদের বিক্রিয়াগুলি ধীরে ধীরে হয়। 7. অজৈব তড়িৎযােজী যৌগগুলি জলীয় দ্রবণে আয়ন উৎপন্ন করায় এদের বিক্রিয়া দ্রুত হয়।
15. হেমােসাইক্লিক বা কার্বোসাইক্লিক যৌগ কাকে বলে? এবং কত প্রকারের কি কি ?
উঃ জৈব যৌগের বদ্ধ শৃঙ্খলটি কেবলমাত্র কার্বন পরমাণু দ্বারা গঠিত হলে তাদের হােমােসাইক্লিক বা কার্বোসাইক্লিক যৌগ বলে। যেমন :
সাইক্লোপ্রােপেন, বেনজিন, সাইক্লোবিউটেন ইত্যাদি।
হােমােসাইক্লিক যৌগগুলি দু'রকম, যথা : (1) অ্যারােমেটিক যৌগ এবং (2) অ্যালিসাইক্লিক যৌগ।
16. অ্যারােমেটিক যৌগ কাকে বলে?
উঃ যেসব জৈব যৌগে এক বা একাধিক বেনজিন বলয় থাকে তাদের অ্যারােমেটিক যৌগ বলে।বেনজিন, ফেনল,ন্যাফথ্যালিন প্রভৃতি যৌগগুলি হল অ্যারােমেটিক যৌগ।
17. অ্যালিসাইক্লিক যৌগ কাকে বলে?
উঃ বেনজিন বলয় বাদে অন্যান্য হােমােসাইক্লিক যৌগকে অ্যালিসাইক্লিক যৌগ বলে। যেমন, সাইক্লোপ্রােপেন (C3H6), সাইক্লোবিউটেন (CH4), সাইক্লোহহাক্সেন (C6H12) প্রভৃতি।
18. হেটোরােসাইক্লিক যৌগ কাকে বলে?
উঃ জৈব যৌগের বদ্ধশৃঙ্খল গঠনে যদি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে অন্য কোনাে পরমাণু (যেমন, অক্সিজেন, সালফার বা নাইট্রোজেন) অংশগ্রহণ করে, তবে তাকে হেটেরােসাইক্লিক যৌগ বলে। যেমন : ফিউরান, থায়ােফিন, পিরিডিন ইত্যাদি।
19. কার্যকরী মূলক কাকে বলে ?
উঃ যেসব মুলক জৈব যৌগের অণুতে উপস্থিত থেকে যৌগগুলির প্রকৃতি ও ধর্ম নির্ধারণ করে, তাদের কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল মূলক বলে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url