এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গঠন ও কাজ উল্লেখ করো

এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গঠন ও কাজ উল্লেখ করো
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলামের গঠন উল্লেখ করো।
উঃ এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকা গঠন- এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকা একক পর্দা বেষ্টিত নালিকাকার বা চ্যানেলের মতাে অংশবিশেষ। এদের পর্দার ব্যাস 50–60A। চ্যানেলের মধ্যে যে তরল থাকে তাকে এন্ডােপ্লাজমিক ধাত্র বলে। এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকা তিন রকমের গঠন যুক্ত হয়, যেমন—
1. সিস্টারনি
2. ভেসিকল এবং 
3. টিউবিউল।
1. সিস্টারনি (Cisternae): এগুলি দেখতে লম্বা, এবং চ্যাপটা থলির মতাে। এগুলি শাখাহীন হয়। এদের ব্যাস সাধারণত 40-50 মাইক্রোমিটার। এরা সাইটোপ্লাজমে সাধারণত সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে। এদের গায়ে অনেক সময় রাইবােজোম দানা থাকে।
2. ভেসিকল (Vesicles): এগুলি সাধারণত ডিম্বাকার বা গােলাকার এবং পর্দাবেষ্টিত গহ্বরের মতাে। এদের ব্যাস 25- 500 মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়। এগুলি সাইটোপ্লাজমে কখনাে-কখনাে দলবদ্ধভাবে থাকে। অগ্ন্যাশয়ের কোশে এরা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। ভেসিকলগুলিকে মাইক্রোজোম বলে।
3. টিউবিউল (Tubules): এগুলি শাখান্বিত নালিকা বিশেষ। এরা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জালকের আকার ধারণ করে। এই নালিকাগুলির ব্যাস সাধারণত 50–190 মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়। এদের গাত্রে সাধারণত রাইবােজোম দানা থাকে না।
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলামের কাজ উল্লেখ করো।
উঃ এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকা এর প্রধান কাজগুলি হল-
1. যান্ত্রিক দৃঢ়তা (Mechanical support): এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকার কোশের সাইটোপ্লাজমীয় কাঠামাে গঠন করে প্রােটোপ্লাজমকে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করে।
2. বিপাকীয় পদার্থের পৃথকরণ (Isolation of metabolic products): এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকার পর্দা অভিস্রবণ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকার বিভিন্ন বিপাকীয় পদার্থকে পৃথক রাখে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে পৃথক রাখে।
3. কোশ অভ্যন্তরীণ পরিবহণ (Intracellular transport): এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকার চ্যানেলগুলি কোশাভ্যন্তরীয় বিভিন্ন পদার্থকে কোশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ করে।
4. প্রোটিন সংশ্লেষ (Protein synthesis): অমসৃণ এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকা প্রােটিন সংশ্লেষ করে। অমসৃণ এন্ডােপ্লাজমীয় জালিকার গায়ে অবস্থিত রাইবােজোম প্রােটিন সংশ্লেষে মুখ্য ভূমিকা নেয়।
5. গ্লাইকোজেন বিপাক: মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা গ্লাইকোজেন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন করে, অর্থাৎ গ্লাইকোজেনােলাইসিসে সাহায্য করে।
6. ফ্যাট সংশ্লেষ: মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা  ফ্যাট সংশ্লেষে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
7. হরমােন নিঃসরণ: মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা টেস্টোস্টেরন, প্রােজেস্টেরন ইত্যাদি কয়েকটি স্টেরয়েড হরমােন ক্ষরণ করে।
৪. কোশ-অঙ্গাণু সৃষ্টি: এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা গলগি বডির সিস্টারনি উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া নিউক্লীয় পর্দা সৃষ্টিতে এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
9. কোশান্তর সংযােগ: একটি কোশের এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা সংলগ্ন কোশের এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা এর সঙ্গে ডেসমােটিউবিউলের মাধ্যমে যােগাযােগ স্থাপন করে।
10. নিউক্লীয় পর্দা গঠন: এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা টেলােফেজ দশায় নিউক্লীয় পর্দা গঠনে অংশত সাহায্য করে।
11. সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুর অবস্থান: এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুগুলিকে সঠিক অবস্থানে থাকতে সাহায্য করে।
12. নির্বিষকরণ: যকৃত কোশের মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিয় জালিকা দেহে প্রবিষ্ট বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়া ধ্বংস করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url