বিভক্তি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও।

বিভক্তি কাকে বলে? বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ দাও।

বিভক্তি কাকে বলে?

উঃ যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে শব্দ বা ধাতুকে পদে পরিণত করে যথাক্রমে কারক নির্ণয়ে ও কাল নির্ণয়ে সাহায্য করে তাকে বিভক্তি বলে। 
যেমন- কানাইবাবুর দাদা কার্তিকপুরে এসেছেন। এখানে 'কানাইবাবু’ শব্দ দুটির সঙ্গে '’, কার্তিকপুর’এর সঙ্গে ‘’ এবং 'আসা’শব্দটির সঙ্গে ‘এছেন’ যুক্ত হয়েছে এবং শব্দগুলির মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
’, ‘’ এবং ‘এছেন’এগুলিই বিভক্তি।
বিভক্তি শব্দের সাধারণ অর্থ কী?
উঃ বিভক্তি শব্দের সাধারণ অর্থ বিভাগ
ব্যাকরণে বিভক্তি শব্দটি কি অর্থে ব্যবহার করা হয়?
উঃ ভাষায় বিশেষ্য ও সর্বনামের কারক ও ক্রিয়ার কাল বােঝাতে ব্যাকরণে ‘বিভক্তি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

বিভক্তির কাজ কি?

উঃ বিভক্তির কাজ গুলি হল-
1. শব্দকে পদে পরিণত করে বাক্যে ব্যবহৃত হতে সাহায্য করা।
2. কারক নির্ণয়ে।
3. ধাতুকে ক্রিয়াপদে পরিণত করে ক্রিয়ার কাল নির্ণয়ে বিভক্তির সাহায্য করে।
বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি?
বাংলা ভাষায় বিভক্তি দুই প্রকার।
1. শব্দ বিভক্তি
2. ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি

শব্দ বিভক্তি কাকে বলে? শব্দ বিভক্তি কত প্রকার?

উঃ যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে তাকে শব্দ বিভক্তি বলে। যেমন-
সে বনে যায়
এই বাক্যে বন + এ = বনে; এখানে ‘’ শব্দ বিভক্তিটি 'বন’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 'বন’ শব্দটিকে পদে পরিণত করে বাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার যােগ্যতা দান করেছে।
শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার। যথা-
1. প্রথমা বা শূণ্য বিভক্তি -  বিভক্তি থাকে শূণ্য, অ
2. দ্বিতীয়া বিভক্তি - বিভক্তি থাকে কে, রে
3. তৃতীয়া বিভক্তি - এখানে বিভক্তি থাকে দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক
4. চতুর্থ বিভক্তি - বিভক্তি থাকে রে
5. পঞ্চমী বিভক্তি - হইতে (হতে), থেকে, চেয়ে
6. ষষ্ঠী বিভক্তি -  র, এর
7. সপ্তমী বিভক্তি - এ, য়, তে
শূন্য বিভক্তির অপর নাম কী?
উঃ প্রথমা বিভক্তি।
প্রথমা বিভক্তি কাকে বলে?
বা
শূন্য বিভক্তি কাকে বলে?
উঃ যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে অপ্রকাশিত বা উহ্য থেকে পদ গঠন করে বা কারক প্রকাশ করে তাকে শূন্য-বিভক্তি বা প্রথমা বিভক্তি বলে। 
বিভিন্ন কারকে শূণ্য বিভক্তির ব্যবহার হয় যেমন-
(ক) কর্তৃকারকে শূন্য-বিভক্তি - রহিম স্কুলে পড়ে, বৃষ্টি পড়ছে। পাখি ডাকে।
(খ) কর্মকারকে শূন্য-বিভক্তি — শিশু চাঁদ দেখে। আমি বই পড়ি। কথা শােনাে।
(গ) করণকারকে শূন্য-বিভক্তি — ছেলেরা মাঠে বল খেলছে। এখন তাস খেলছাে কেন?
(ঘ) অপাদানকারকেশূন্য-বিভক্তি — স্কুল পালিয়ে কোথায় ছিলে? ট্রেন শিয়ালদা ছাড়ল।
(ঙ) অধিকরণকারকে শূন্য-বিভক্তি — আজ স্কুল যাবি না? এখন বাবা বাড়ী নেই।

সপ্তমী বিভক্তি

সপ্তমী বিভক্তি গুলি হল এ, য়, তে বিভক্তি

এ বিভক্তির উদাহরণ

বাক্যে নানা কারকে এ-বিভক্তির ব্যবহার দেখা যায়।
(ক) কর্তৃকারকে এ-বিভক্তিঃ 
  রামে মারলে মারবে, রাবণে মারলেও মারবে।
(খ) কর্মকারকে এ-বিভক্তিঃ এই অধমে দয়া কর। বৃথা গঞ্জ দশাননে
(গ) করণকারকে এ-বিভক্তিঃ এই সামান্য অর্থে কিছুই হবে না। বাণে বাণে অন্ধকার হয়ে গেলাে।
(ঘ) অপাদানকারকে এ-বিভিক্তঃ এ মেঘে বৃষ্টি হবে না। চোখে জল পড়ছে কেন? দুধে দই হয়।
(ঙ) অধিকরণকারকে এ-বিভক্তিঃ বনে বাঘ থাকে।দুধে মাখন আছে। আগুন লেগেছে বনে বনে

য়-বিভক্তির উদাহরণ

অধিকরণ ছাড়াও অন্যান্য কারকে য়-বিভক্তি দেখা যায়।
(ক) কর্তৃকারকে য়-বিভক্তিঃ রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে। 
তােমায় খেলতে হবে।
(খ) কর্মকারকে য়-বিভক্তিঃ তােমায় কতবার বলেছি। 
আমায় কিছু বলল না যেন।
(গ) করণকারকে য়-বিভক্তিঃ টাকায় কীনা হয়? তােমার এ মাথায় কিছু হবে না। 
বর্শায় তােমায় বিদ্ধ করবাে।
(ঘ) অপাদানকারকে য়-বিভক্তিঃ এটা রাস্তায় কুড়িয়ে পেলাম।
(ঙ) অধিকরণকারকে য়-বিভক্তিঃ এভারেস্টের চূড়ায় ভারতের পতাকা পোঁতা হল। 
গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর।

তে-বিভক্তির উদাহরণ

অধিকরণ ছাড়াও অন্যান্য কারকে তে-বিভক্তির ব্যবহার হয়।
(ক) কর্তৃকারকে তে বিভক্তিঃ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে। পাখিতে ফল খায়।
(খ) করণকারকে তে-বিভক্তিঃ সে ছুরিতে হাত কেটে ফেলেছে। জালেতে মাছ ধর হয়।
(গ) অধিকরণকারকে তে-বিভক্তিঃ ঘরেতে অতিথি এসেছে। আকাশেতে কত তারা।

ষষ্ঠী বিভক্তি

ষষ্ঠী বিভক্তি গুলি হল র, এর বিভক্তি

র-এর বিভক্তি উদাহরণ

প্রায় সমস্ত কারকেই র এবং এর বিভক্তির ব্যবহার দেখা যায়।
(ক) কর্তৃকারকে র এবং এর-বিভক্তিঃ 
আপনার থাকা হয় কোথায় ? 
মহাশয়ের কখন আসা হয়েছে?
(খ) কর্মকারকে র এবং এর-বিভক্তিঃ 
তােমার দর্শন পাওয়া মুশকিল। 
ঠাকুরের পুজো শেষ হয়েছে।
(গ) করণকারকে র এবং এর-বিভক্তিঃ 
তাসের খেলা দেখাতে সে ওস্তাদ। 
কথার আঘাত সহ্য করা কঠিন।
(ঘ) নিমিত্ত কারকে র এবং এর-বিভক্তিঃ 
তােমার জন্য বই এনেছি। 
গরিবের জন্য কিছু করাে।
(ঙ) অপাদানকারকে র এবং এর-বিভক্তিঃ শিয়ালদার ছাড়া ট্রেন দমদম এল দুঘন্টায়। 
বাঘের ভয় নেই এখানে।
(চ) অধিকরণকারকে র এবং এর-বিভক্তিঃ 
বনের বাঘ হিংস্র হয়।
পুকুরের মাছের স্বাদ ভাল।

ধাতু বিভক্তি

ধাতু বিভক্তি কাকে বলে?
বা
ক্রিয়া বিভক্তি কাকে বলে?
উঃ যে বিভক্তি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে তাকে ধাতু বিভক্তি বলে।
বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎকালে এবং নানা পক্ষে ধাতু-বিভক্তি নানা রূপের হয়। যেমন -
বর্তমানে - ই, অ, এ, ছি, ছ, ছে, 
অতীতে - এ ছিলাম, এ ছিলে, এ ছিল, তাম, তে,
ভবিষ্যতে - ব, বে।
যেমন-
বর্তমানকাল অতীতকাল ভবিষ্যৎ কাল
আমি পড়ি (পড়্+ই) আমি পড়েছিলাম (পড়্+ছিলাম) আমি পড়ব (পড়্+ব)
তুমি পড় (পড়্+অ) তুমি পড়েছিলে (পড়্+ছিলে) তুমি পড়বে (পড়্+বে)
সে পড়ে (পড়+এ) সে পড়েছিল (পড়্+ছিল) সে পড়বে (পড়্+বে)
..
ধাতু বিভক্তির আরেক নাম কী?
উঃ ধাতু বিভক্তির আরেক নাম ক্রিয়া বিভক্তি।

আরো পড়ুন-
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous September 3, 2023 at 7:33 PM

    good

Add Comment
comment url