ইসলামের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ

ইসলামের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ

ইসলামের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগের ছোটো প্রশ্ন উত্তর

1. ভারতের সঙ্গে ইসলামের যোগাযােগ কখন থেকে শুরু হয় ?

উত্তরঃ দ্বিতীয় খলিফা ওমরের সময়েই (634-644 খ্রিঃ) ভারতের সঙ্গে ইসলামের যােগাযােগ স্থাপিত হয়।
2. সিন্দুদেশ কে অধিকার করে ?
উত্তরঃ মহম্মদ-বিন-কাসিমের নেতৃত্বে আরব সেনাবাহিনী সিন্ধুদেশ দখল করে।
3. ভারতে সুলতানি আমল কতদিন স্থায়ী ছিল ?
উত্তরঃ প্রায় তিনশ’ বছর (1206-1526 খ্রিঃ)।
4. দাস বংশ কতদিন রাজত্ব করেছিল ?
উত্তরঃ দাস বংশ রাজত্ব করেছিল 1203-1290 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
5. নানক কে ছিলেন?
উত্তরঃ নানক ছিলেন শিখ ধর্মের প্রবর্তক। 1469 খ্রিস্টাব্দে লাহােরে নানকের জন্ম হয়। নানক জাতিভেদ, ধর্মভেদ মানতেন না। তিনি প্রচার করেছিলেন যে ঈশ্বরে একনিষ্ঠ ভক্তি এবং ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করাই মােক্ষলাভের একমাত্র উপায়।
6. সুলতান মামুদ কে ছিলেন? তিনি কতবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিলেন?
উত্তরঃ সুলতান মামুদ ছিলেন গজনী রাজ্যের রাজা। তিনি সতেরাে বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিলেন।
7. কুতুবউদ্দীনের সময় থেকে কয়টি সুলতানি বংশ ভারতে রাজত্ব করেছিল?
উত্তরঃ কুতুবউদ্দীনের সময় থেকে পরবর্তী তিনশ বছরে পাঁচটি সুলতানি বংশ, যেমন—দাস বংশ, খলজী বংশ, তুঘলক বংশ, সৈয়দ বংশ ও লােদী বংশ ভারতে রাজত্ব করেছিল।
8. আলাউদ্দীনের শাসনকালে সুলতানি সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারতে কতদূর বিস্তারলাভ করেছিল?
উত্তরঃ আলাউদ্দীনের শাসনকালে সুলতানি সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারতে মাদুরা পর্যন্ত বিস্তারলাভ করেছিল।
9. দিল্লির সুলতানদের মধ্যে কাকে খামখেয়ালী রাজা বলা হয় ?
উত্তরঃ মহম্মদ বিন-তুঘলককে খামখেয়ালী রাজা বলা হয়।
10. ব্যবসায়ী হিসেবে মুসলিমরা ভারতের কোন অংশে আগমন করেন?
উত্তরঃ ব্যবসায়ী হিসেবে মুসলিমরা প্রথমে কেরলে ও পরে সিন্ধুদেশে প্রবেশ করে।
11. মুসলিমদের প্রাচীন ভারতের কী কী বিষয় আকৃষ্ট করেছিল?
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত ভাষায় রচিত জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, গণিতশাস্ত্র ও দর্শনশাস্ত্র, সংগীত, চিত্রকলার প্রতি মুসলমানরা আকৃষ্ট হয়।
12. আবু মাসার কে ছিলেন?
উত্তরঃ আবু মাসার ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
13. তরাইনের যুদ্ধ কত সালে হয়েছিল ?
উত্তরঃ 1192 খ্রিস্টাব্দে।
14. দিল্লি সুলতানি শাসন কবে শুরু হয়?
উত্তরঃ 1206 খ্রিস্টাব্দে।
15. জিনিসের বাজার দর কে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন?
উত্তরঃ আলাউদ্দীন খলজী।
16. তামার নােট কোন সুলতান প্রবর্তন করেন?
উত্তরঃ মহম্মদ বিন-তুঘলক।
17. মােগল সাম্রাজ্যের সূচনা হয় কবে?
উত্তরঃ 1526 খ্রিস্টাব্দে।
18. দোঁহা কী?
উত্তরঃ কবীরের দুই পংক্তির কবিতাগুচ্ছকে হিন্দী সাহিত্যে দোঁহা বলে।
19. চৈতন্যদেব কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ চৈতন্যদেব নবদ্বীপ ধামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
20. আমীর খসরু কে ছিলেন?
উত্তরঃ আমীর খসরু ছিলেন সুলতান আলাউদ্দীনের সভাকবি।
21. সমগ্র দক্ষিণ ভারতে কোন সুলতানের শাসন বিস্তৃত হয় ?
উত্তর। মহম্মদ বিন-তুঘলকের শাসনকালে সমগ্র দক্ষিণ ভারতে তুঘলক শাসন বিস্তৃত হয়।
22. বড়াে সােনা মসজিদ কারা নির্মাণ করেন?
উত্তরঃ সুলতানি যুগে বড়াে সােনা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল গৌড়ে।
23. রাণাকুম্ভের বিজয়সৌধ কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ চিতােরে।
24. মহাভারত কোন যুগে বাংলায় অনুবাদ করা হয় ?
উত্তরঃ সুলতান জয়নাল আবেদিনের চেষ্টায় মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করা হয়।
25. সুলতানি যুগের শেষ সুলতান কে ছিলেন?
উঃ ইব্রাহিম লোদী।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

1. মুসলমানদের আগমনের প্রথম পর্বে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির মিলন কেমন হয়েছিল?
উত্তরঃ আরব বণিকদের সঙ্গে মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদরা ভারতের পশ্চিম উপকূলে কেরলে আসেন। বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিতে তারা বসবাস শুরু করেন। মিলেমিশে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তারা বাস করেছেন বহু বছর। স্থানীয় হিন্দু শাসকদের অনুমােদন লাভ করে তারা প্রার্থনার জন্য মসজিদও স্থাপন করেন।
2. তরাইনের যুদ্ধের ফলাফল কী ছিল?
উত্তরঃ 1192 খ্রিস্টাব্দে তরাইনের যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ চৌহানকে মহম্মদ ঘােরী পরাজিত করে আজমীর ও দিল্লি অধিকার করেন।
3. সুলতানি রাজত্বের দাসবংশের শাসকদের কৃতিত্ব কী ছিল?
উত্তরঃ সুলতানি রাজত্বের দাসবংশের শাসকদের বড়াে কৃতিত্ব হল-
1. তারা দুর্ধর্ষ মােঙ্গল জাতির আক্রমণ প্রতিহত করে ভারতকে রক্ষা করেন।
2. তারা সিন্ধুপ্রদেশ ও বঙ্গদেশের বিদ্রোহকে দমন করেন, গজনীর সুলতানদের হাত থেকে পাঞ্জাবকে রক্ষা করেন এবং আমীর উলেমাদের ক্ষমতাকে সংযমের মধ্যে বেঁধে ভারতবর্ষে নব প্রতিষ্ঠিত মুসলমান সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।
3. তাঁরা উজ্জয়িনী প্রভৃতি রাজ্য অধিকার করে ভারতবর্ষে মুসলমান রাজ্যের সীমাকে বৃদ্ধি করেন।
4. মহম্মদ বিন-তুঘলকের শাসন নীতির মূল কথা কী ছিল?
উত্তরঃ মহম্মদ বিন-তুঘলকের শাসন নীতির মূল কথা ছিল নানা বিষয়ে সংস্কার সাধন, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংস্কার—তামার নােটের প্রচলন।
5. ভক্তিবাদী ও সুফী আন্দোলনের প্রধান প্রধান সাধক কে কে ছিলেন?
উত্তরঃ ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রধান প্রধান সাধক ছিলেন রামানন্দ, চৈতন্যদেব, কবীর, নানক, বল্লভাচার্য, মীরাবাঈ ও নামদেব। সুফী সাধকদের মধ্যে স্মরণীয় ছিলেন—
নিজামউদ্দিীন আউলিয়া, মঈনউদ্দীন চিশতী, সেলিম চিশতী, শাহ জালাল
6. ভক্তি আন্দোলনে কবীরের মূল আদর্শ কী ছিল?
উত্তরঃ ভক্তি আন্দোলনে কবীরের মূল আদর্শ ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা। তিনি প্রচার করেছিলেন সব ধর্মই এক। মানুষে মানুষে কোনাে প্রভেদ নেই। হিন্দুদের ঈশ্বর আর মুসলমানদের আল্লার মধ্যে কোনাে তফাত নেই।
7. কুতুবউদ্দীন কীভাবে দিল্লিতে দাস রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তরঃ দাস রাজবংশের প্রথম সূলতান কুতুবউদ্দীন আইবক ছিলেন মহম্মদ ঘােরীর তুরক জাতীয় ক্রীতদাস। ভারতে মুসলিম রাজ্য স্থাপনে তিনি ছিলেন মহম্মদ ঘােরীর ডান হাত। নিঃসন্তান অবস্থায় ঘােরীর মৃত্যু হলে 1206 খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দীন লাহােরে সিংহাসনে আরােহণ করেন। তাকেই দিল্লির প্রথম স্বাধীন সুলতান বলা হয়।
তার পরবর্তী দু’জন সুলতান প্রথমে ক্রীতদাস ছিলেন। এজন্য দিল্লির সিংহাসনে তিনি যে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন তা দাসবংশ নামে পরিচিত। মাত্র চার বছর রাজত্ব করার পর কুতুবউদ্দীনের মৃত্যু হয়।
8. রিজিয়ার শাসনকাল বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ রিজিয়া ছিলেন যেমন বুদ্ধিমতী তেমনি দৃঢ়চেতা। তিনি কঠোর হস্তে বিশৃঙ্খলা দমন করেন। তিনি পুরুষের বেশে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি তুরকি অমরদের চক্রান্তে নিহত হন।
হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি সমন্বয় কীভাবে দেখা দেয় ?
উত্তরঃ স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাসের ফলে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি সমন্বয় সহজ হয়েছিল।
9. ইন্দো-ভারতীয় স্থাপত্যরীতি বলতে কী বােঝায়?
উত্তরঃ সুলতানি আমলে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটে। তার ফলে যে বিশেষ শিল্পরীতি গড়ে ওঠে তা ইন্দো-ভারতীয় স্থাপত্যরীতি নামে পরিচিত। মুসলমানরা মিনার, প্রাসাদ, নগর অথবা অন্যান্য ইমারত তৈরি করার জন্য হিন্দু-শিল্পী ও রাজমিস্ত্রীদের নিযুক্ত করুতেন। স্বভাবতই ইসলামীয় শিল্প ও স্থাপত্যরীতিতে হিন্দু প্রভাব পড়ে। তাছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প ও স্থাপত্যরীতিতে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

আরো পড়ুন-
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url