ঐক্য ও সমন্বয়ই হল ভারতীয় জীবনের মূল সুর —উদ্ধৃিতিটি ব্যাখ্যা করো।

'ঐক্য ও সমন্বয়ই হল ভারতীয় জীবনের মূল সুর' —উদ্ধৃিতিটি ব্যাখ্যা করো।

উঃ ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যে পূর্ণ দেশ। যার জন্য ঐতিহাসিকগণ ভারতবর্ষকে বিশ্বের সারাংশ বা পৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ (Epitome of the world) বলেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে বিভিন্ন ঐক্যের সুর শোনা যায়। যেগুলি হলো-

(1) জাতিগত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

সময়ের স্রোতধারায় প্রাচীনকাল থেকেই পারসিক,
হূণ, আর্য, শক, গ্রিক, কুষাণ পল্লব, মোগল প্রভৃতি জাতি ভারতে প্রবেশ করেছে। যার জন্য ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতকে ‘নৃতত্বের জাদুশালা’ (ethnological) বলেছেন। নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে অনেকে বসবাস শুরু করেও ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে পারেনি। বরং তা গ্রহণ করে ভারতীয় সমাজে বিলীন হয়ে এক মৌলিক সভ্যতা গড়ে তুলেছে।

(2) ভাষাগত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

প্রধান অপ্রধান মিলে ভারতে প্রায় 200টি ভাষা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে মূল ভাষার তালিকায় আছে 18টি ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রাকৃত ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা। উত্তর ভারতের মূলভাষা সংস্কৃত, যা থেকে হিন্দি, বাংলা, মারাঠি প্রভৃতি ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে। দক্ষিণ ভারতের মূলভাষা দ্রাবিড় যা থেকে তামিল, তেলেগু প্রভৃতি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। ভাষাগত বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও আমরা একই সুরে জেগে উঠি–‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে........।

(3) ধর্মীয় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতবর্ষ। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব এখানে ঘটেছে। নানক, চৈতন্যদেব, কবির, রামানুজ, শঙ্করাচার্য প্রমুখদের ধর্ম প্রচারের মধ্যে দিয়ে ঐক্যের সুর বেজে উঠেছে। দুর্গোৎসব, দোল, বড়োদিন, মহরম ইত্যাদি উপলক্ষ্যে আমরা আনন্দে মেতে উঠি। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলে সত্যপীর, বনবিবি, ধর্মঠাকুরের আরাধনায় মগ্ন হই।

(4) রাজনৈতিক বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য

ভারতের প্রতি প্রান্তে রাজনৈতিক বৈষম্য আছে। প্রাচীনকালে একরাট, বিরাট, সম্রাট, রাজচক্রবর্তী প্রভৃতি উপাধি ধারণ এবং অশ্বমেধ, বাজপেয় প্রভৃতি যজ্ঞ ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যের বাহক। বর্তমানেও সে এক সুরে বেজে চলেছে।

কোন্ ঐতিহাসিক ভারতবাসীর সমন্বয়ের আদর্শকে ‘বৈচিত্র্যর মধ্যে ঐক্য’ বলেছেন?
উঃ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url