আতিথেয়তা রচনা

আতিথেয়তা রচনা

ভূমিকা

আতিথেয়তা মানবজীবনের একটি ধর্ম। আমাদের দেশের মানুষ অতিথি সেবাকে জীবনের একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ কাজ বলে মনে করেন। রামায়ণ-মহাভারতে অতিথেয়তার নানা কাহিনি আছে। সে সব কাহিনি থেকে সহজে অনুমান করা যায় ভারতের লোকেরা খুবই অতিথিপরায়ণ। অতিথিসেবা আমাদের দেশের মানুষেরা অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে যুগ যুগ ধরে করে আসছেন।

আতিথেয়তা কী?

মানুষ খাওয়া পরা এবং নিজস্ব গন্ডীর মধ্যে থেকে মানবধর্মের কিছু আচরণীয় কাজ করে থাকে। এই কাজগুলি না করলে তার কিছু আসে যায় না। তবুও মানুষ অতিথিসেবায় নিজেকে নিঃস্বার্থভাবে নিয়োজিত করে। কারণ আমাদের দেশে একটি আপ্ত বাক্য আছে যা অতি অবশ্য পালনীয়। বংশ পরম্পরায় এই বাক্যটি সব পরিবারই পালন করে আসে। অতিথি নারায়ণ। অতিথিকে আমরা ভগবান বলে ভেবে থাকি এবং তাকে সাধ্য অনুযায়ী সেবা করি। আগেকার দিনে অতিথিকে পাদ্য অৰ্ঘ্য দিয়ে বরণ করা হতো। অতিথির পা ধুইয়ে ভাল করে মুছিয়ে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে গ্রহণ করা হতো। দুপুরে কোনো মানুষ গৃহে এলে গৃহকর্তা নিজে না খেয়ে তার আহার্য বড় পরম শ্রদ্ধায় অতিথিকে খেতে দেন। এমনি অতিথিপরায়ণতার কথা আমাদের মহাকাব্যগুলিতে পাওয়া যায়। অতিথির সেবা তাই মানুষের কাছে একটি ব্রত।

আতিথেয়তার স্বরূপ

যুগের পরিমণ্ডলে অনেক বিবর্তিত হয়েছে। যেভাবে অতীতে অতিথি সেবা করা হতো, সেভাবে আজকাল আর তা সম্ভব নয়। একান্নবর্তী পরিবারগুলি ভেঙে গেছে। পরিবারের আয়তন যেমন ছোটো হয়েছে—মানুষের হৃদয়ের প্রসারতাও তেমনি অনেক কমে গেছে। মানুষ আজ কিছুটা নিজের পরিমণ্ডল এবং ছোটো গণ্ডির মধ্যে মানবধর্মের অতিপুরানো এই সেবাকর্মকে অনেক সঙ্কুচিত করে ফেলেছে। মানুষের মনের সেই উদার সেবাপরায়নতার দিকটি আর স্বতস্ফূর্তভাবে দেখা যায় না। এর কারণ হয়ত অনেক আছে। তবে প্রধান কারণ মনে হয় অর্থনৈতিক। তাছাড়া অতীতের সেই সামাজিক পরিমণ্ডল আজ আর নেই। পারস্পরিক হৃদ্যতা, সহমর্মিতা অনেক কমে গেছে। মানুষ যেভাবে আজ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে—সেখানে এমনি অতিথি-পরায়ণতার স্থান কোথায়? আত্মীয় সম্পর্কিত মানুষ ছাড়া অনাত্মীয় কোনো অতিথিকে মানুষ আজ সহজে গ্রহণ করতে পারে না। এর মূলে নানা রকমের চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদির ঘটনা মানুষকে সচেতন করে রেখেছে। হঠাৎ করে কোনো অনাত্মীয় মানুষকে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করতে চায় না।
পারিবারিক পরিবেশে আতিথেয়তার এই স্বরূপ-এর বিবর্তন দেখা দিলেও রাষ্ট্রীয় পরিবেশে এই আতিথেয়তার স্বরূপ অনেক উন্নত ভাবে চোখে পড়ে। দেশবিদেশের রাষ্ট্রনায়কদের আতিথেয়তার ব্যাপারে আমাদের কোনো ত্রুটি থাকে না। কারণ সেখানে দেশের সম্মান জড়িয়ে আছে।

উপসংহার

আমাদের দেশের মানুষ অতিথিবৎসল বলে পরিচিত। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ যাই হোক না আতিথেয়তা এই পরম মানবিক ধর্মকে উপেক্ষা করা যায় না। কারণ এই উপেক্ষা পরবর্তী প্রজন্মের মনে ঠাঁই করে নিতে পারে। সেই হিসেবে আতিথেয়তা প্রসঙ্গে সমাজের প্রত্যেক মানুষকে সচেতন ভাবে মনে রাখতে হবে। কারণ মানবিক মূল্যবোধকে হারানো চলবে না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url