মহাশূন্যে যাত্রা রচনা

মহাশূন্যে যাত্রা রচনা

ভূমিকা

মানুষের মনে অজানার আকর্ষণ চিরকাল কাজ করে চলেছে। ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, রাক্ষস-খোক্কস, সেই আদ্দিকাল থেকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে তার কল্পনাকে। তার কল্পনায় চাঁদের বুড়ী সুতো কেটে চলেছে অহরহ। বিজ্ঞানীরা সেই কল্পলোককে বাস্তবে রূপ দিতে চনে। মহাকাশ পরিক্রমার প্রথম পর্যায়ে এরোপ্লেন পর্যন্ত এসে থেমেছিল। সেই আকর্ষণে এই শতাব্দীর পঞ্চম দশক থেকে মহাকাশের দিকে দৃষ্টি পড়ল বিজ্ঞানীদের।

মহাশূন্যে যাত্রা

১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা অক্টোবর রুশ বিজ্ঞানীরা মহাকাশে পাঠালেন তাঁদের প্রথম উপগ্রহ স্পুটনিক— তারপর ওই বৎসরই ৩রা নভেম্বর—লাইকা নামে একটা কুকুরকেও পাঠান হয়েছিল তার মধ্যে। প্রাণীদেহে মহাশূন্যের প্রভাব কী তা জেনে নেন রুশ বিজ্ঞানীরা বৈদ্যুতিক ছবির সাহায্যে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে রাশিয়ার তৃতীয় উপগ্রহ উৎক্ষিপ্ত হয় মহাশূন্যে—তার ওজন ২৯৭৫ পাউন্ড, পৃথিবীকে সেটা প্রদক্ষিণ করেছিল ১০ হাজার বারেরও বেশি।

রাশিয়ার কৃতিত্ব

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই এপ্রিল ‘ভস্তক’ নামক যানে রাশিয়া প্রথম মহাশূন্যে পাঠালেন মানুষ—মেজর ইয়ুরি গ্যাগারিন। তিনি একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসেন। আগস্ট মাসে রাশিয়া মহাশূন্যে প্রেরণ করেন মেজর স্টেপালেসভচ টিটভকে। তিনি ২৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট মহাশূন্যে আবর্তন করে ফিরে আসেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে রুশরা মহাশূন্যে পাঠান ভ্যালেন্টিনা তেরেস্কোভা—ইনিই প্রথম মহাশূন্যে প্রদক্ষিণকারী নারী। এরপর রুশরা দুজনকে একসঙ্গে মহাশূন্যে পাঠান, তার মধ্যে একজন মহাকাশযান থেকে বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ মহাশূন্যে ভাসমান ছিলেন।

আমেরিকার কৃতিত্ব

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে আমেরিকা বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে প্রেরণ করেন কমান্ডার এলান বোফার্ডকে–জুলাই মাসে প্রেরিত হন ক্যাপ্টেন গ্রীসন। আমেরিকার এক কর্নেল জন গ্লেন তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। আমেরিকার হেনরি আর্মস্ট্রং ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ১৬ই জুলাই অ্যাপোলো ১১ এবং চন্দ্রযান ঈগলের সাহায্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেন। ওই বছরই নভেম্বর মাসে অ্যাপোলো ১২-র যাত্রীরা ৮ ঘণ্টা চন্দ্ৰপৃষ্ঠে কাটিয়ে বহু তথ্য সংগ্রহ করে এনেছেন।

ভারতের কৃতিত্ব

প্রযুক্তি বিদ্যায় ভারতও অগ্রসর হয়েছে অনেক দূর। সোভিয়েত সহযোগিতায় ভারতে মহাকাশ গবেষণা আরম্ভ হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। থুম্বায় একটি
রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রও স্থাপিত হয়েছে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েতের সাহায্যে এই দেশ থেকেই উৎক্ষিপ্ত হয়েছে ভারতের প্রথম উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’—একইভাবে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে উৎপেক্ষণ করেন ভারতের দ্বিতীয় উপগ্রহ ‘ভাস্কর’। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞানীরাই ভারতবর্ষ থেকে উৎপেক্ষণ করেন তৃতীয় উপগ্রহ ‘রোহিনী'।

উপসংহার 

দূরদর্শনের সমস্ত কেন্দ্রে একই শব্দ ও চিত্র প্রেরণের উদ্দেশ্যে এবং যথাযথ আবহাওয়ার তথ্য জানার জন্য ভারত ইনস্যাট-১এ এবং ইনস্যাট-১বি মহাশূন্যে প্রেরণ করেছে। প্রথমটি নষ্ট হয়ে গেলেও দ্বিতীয়টি আশানুরূপ কাজ করে চলেছে।

এই প্রবন্ধ অনুসরণে লেখা যায়
1. অন্তরীক্ষ বিজয়।
2. মহাশূন্যে অভিযান।
3. মহাকাশ অভিযান ও ভারত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url