মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা

মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা

ভূমিকা

 জননী ও জন্মভূমিকে স্বর্গের থেকেও বড়ো বলে মনে করা হতো এবং সেই সঙ্গে মনে করা হতো যে, পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ। স্বীকার করা হয়েছে যে, পিতার প্রীতিতেই সকল দেবতা প্রীত হন। সুতরাং ভারতবর্ষে মাতাপিতার মর্যাদা ছিল সব থেকে ওপরে।

সন্তানদের ভবিষ্যৎ

পিতামাতাই শিশুদের লালন-পালন করে বড়ো করে তোলেন। তাঁদেরই সাহায্যে পৃথিবীর সৌন্দর্য দর্শন, তাঁদেরই প্রচেষ্টায় ও যত্নে দুর্বল-অক্ষম শিশুর পুষ্টিলাভ–দৃঢ় পদক্ষেপ শিক্ষা। কেবল দেহের শক্তি নয়, দেহ ও মনের শক্তি অর্জন করতেও কিন্তু সাহায্য করেন তাঁরা। যে শিশু অসহায়ভাবে শুয়ে শুয়ে হাত-পা নাড়ত এবং প্রতি মুহূর্তে যে নিয়ন্ত্রিত হতো, পিতা-মাতা তাকেই পরবর্তীকালে সমাজ ও সংসারের নিয়ন্ত্রণকারী করে তোলেন। পৃথিবীর সৌন্দর্য সুধা পান করেই সন্তানরা ক্ষান্ত থাকে না উত্তরকালে সংসার এবং সমাজকে সুন্দরতর করে তোলার অধিকার এবং দায়িত্বও এসে পড়ে তাদেরই ওপর। উপযুক্ত পিতামাতা সন্তানদের উপযুক্ত করে তোলেন অনেক কষ্ট স্বীকার করে। শক্তি-বিদ্যা-বুদ্ধির অভাবে সন্তান যেন ভবিষ্যৎ জীবনে প্রতিযোগিতায় পেছিয়ে না পড়ে সেদিকে থাকবে মাতা-পিতার সতর্ক দৃষ্টি।

পিতামাতার সমদৃষ্টি

চলিত কথায় বলা হয় যে, ‘কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়।' অর্থাৎ সন্তান অন্যায় করতে পারে, মাতা-পিতার প্রতি অসদাচরণ করতে পারে কিন্তু মাতা কখনও সন্তানকে তুচ্ছ মনে করেন না। সমস্ত সন্তানের প্রতিই থাকে মাতাপিতার সমদৃষ্টি—স্নেহ-ভালোবাসা। অক্ষম দুর্বল সন্তানদের প্রতি স্বভাবতই তাঁদের নজর বেশি থাকে। দুর্বলের প্রতি সকল মানুষেরই অধিক প্রীতি লক্ষ্য করা যায় কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সন্তানদের প্রতি মাতাপিতার সমদৃষ্টি নেই।

কর্তব্য-চেতনা

সন্তানরা যতই যৌবনের পথে এগিয়ে চলে পিতামাতাও ততই এগিয়ে চলেন বার্ধক্যের পথে। স্বাভাবিক নিয়মেই একদিন যারা ছিল অশক্ত তারা হয় দৃঢ় শক্তিমান—যারা ছিল শক্তসামর্থ্য তারা হয়ে ওঠে দুর্বল অশক্ত। যে পিতামাতা একদিন রোজগার করে সন্তানদের মুখে অন্ন যোগাতেন সেই পিতামাতাকে বয়সের জন্য অবসর নিতে হয় কর্মস্থল থেকে। রোজগার করা তখন আর তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সন্তানরা তখন উপযুক্ত হয়ে রোজগার করে। পিতামাতার যৌথ প্রচেষ্টাতেই সন্তানদের সমর্থ হয়ে ওঠা। এ সময়ে পিতামাতার কথা স্মরণ করা প্রত্যেকটি সন্তানের উচিত। পিতা-মাতাকে তখন সন্তানের মতো করেই পালন করা
কর্তব্য—একথা প্রত্যেক সন্তানেরই বোঝা উচিত।

কর্তব্য পালন ও ভবিষ্যৎ ও উপসংহার 

দুর্ভাগ্যবশত আজ বহু সংসারে বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানেরা বিশেষ করে পুত্রগণ অক্ষম বৃদ্ধ পিতামাতাকে অধিক দিন শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখছে না। একান্নবর্তী পরিবার তো ভেঙেছেই, এখন পরিবার হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের পুত্র-কন্যারা। এই নতুন পরিবারে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অনুপস্থিত। সংসার-জীবনের কেন্দ্রে যে স্নেহ-প্রীতি ছিল, আজ তা হয়েছে কেন্দ্ৰচ্যুত। পিতামাতার প্রতি কর্তব্য পালন সংসার তথা সমাজকে বাঁচাবার পথও বটে।

এই প্রবন্ধ অনুসারে লেখা যায় :
1. সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য
2. সমাজ-জীবনে পিতামাতার সহিত সন্তানের সম্পর্ক
3. মাতাপিতা ও সন্তানের পরস্পর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url