আর্য সভ্যতা প্রশ্ন উত্তর
আর্য সভ্যতা প্রশ্ন উত্তর
1. আর্য কথার অর্থ কি?
উঃ আর্য কথার অর্থ সৎবংশজাত বা অভিজাত মানুষ।
2. আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ কোনটি?
উঃ আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋকবেদ।
3. কোন লিপি থেকে আর্যদের পরিচয় পাওয়া যায়?
উঃ স্যার অরেলস্টাইন আবিষ্কৃত এশিয়া মাইনর-এ প্রাপ্ত ‘বােঘজকোই’ লিপি (1400 খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) থেকে আর্যদের পরিচয় পাওয়া যায়।
4. বৈদিক যুগে উত্তর ভারতে গড়ে ওঠা দুটি নতুন নগরের নাম লেখ।
উঃ কৌশাম্বি, হস্তিনাপুর।
5. এশিয়া মাইনরে প্রাপ্ত শিলালিপির নাম কি?
উঃ বােঘজকোই।
6. ইরাবতী নদীর অপর নাম কি?
উঃ রাভী নদী।
7. বেদ শব্দের অর্থ কি?
উঃ বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান।
8. আর্যরা কোন ভাষায় কথা বলত?
উঃ সংস্কৃত ভাষায়।
9. আর্যদের বসতবাড়ি কিসের তৈরি?
উঃ কাঠের।
10. আর্যদের প্রধান উপজীবিকা কি ছিল?
উঃ কৃষিকাজ।
11. পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজার পত্নীকে কি বলা হত?
উঃ মহিষী।
12. আর্য সমাজে ধনী ব্যক্তি কাকে বলা হত?
উঃ যার প্রচুর গবাদিপশু রয়েছে তাকে ধনী ব্যক্তি বলা হত।
13. বৈদিক যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
উঃ জাতিভেদ প্রথা।
14. দশ রাজার যুদ্ধ কোন নদীর তীরে হয়েছিল?
উঃ পুরুষনি ( রেবি)
15. বৈদিক আর্যদের ধর্ম কি ছিল?
উঃ যঞ্জ এবং প্রকৃতি পুজো।
16. প্রাচীন ভারতবর্ষে কোন লিপি ডানদিক থেকে বাঁদিকে লেখা হতো?
উঃ খরোষ্ঠী।
17. ঋকবেদে কোন ধাতুর উল্লেখ নেই?
উঃ সিসা।
18. আর্যদের ধর্মগ্রন্থের নাম কি?
উঃ বেদ।
19. ঋকবেদে কটি স্তোত্র আছে?
উঃ 1028 টি।
20. আর্য মতে পুরাণের সংখ্যা কয়টি?
উঃ 18 টি।
21. নিস্ক শব্দের অর্থ কি?
উঃ নিস্ক শব্দের অর্থ মুদ্রা।
22. মহাভারতের যুদ্ধ কোন সময়ে হয়েছিল?
উঃ 1000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
23. ঋক বৈদিক যুগের প্রধান দেবতা কে ছিলেন?
উঃ ঋক বৈদিক যুগের প্রধান দেবতা ছিলেন অগ্নি, বরুণ, ইন্দ্র, উষা, সোম, সাবিত্রী, যম, পৃথিবী ইত্যাদি। আর্যরা নানা প্রাকৃতিক শক্তি উপাসনা করত যেমন- বৃষ্টি , চন্দ্র , সমুদ্র , সূর্য , আকাশ , পাহাড় , বায়ুকে।
আর্য সভ্যতা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. আর্য কারা?উঃ আর্য’ বলতে কোনাে জাতিকে বােঝায় না। সংস্কৃতিতে আর্য কথাটির অর্থ সৎবংশজাত বা অভিজাত মানুষ। আর্য বলতে একটি ভাষাগােষ্ঠীর লােকেদের বােঝানাে হয়ে থাকে। ইন্দো-এরিয়ান ভাষাভাষী গােষ্ঠীর লােকেদেরই আর্য বলা হয়।
2. প্রাচীন বৈদিক যুগে আর্যদের বাসভূমি কোথায় ছিল?
উঃ ঋগবেদ থেকে জানা যায় যে, আফগানিস্তানের সীমান্ত থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে আর্যরা প্রথম বসতি স্থাপন করে।
তবে, আর্যদের আদি বাসস্থান ভারতে না ভারতের বাইরে এই নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক দেখা যায়, অধ্যাপক ব্রান্ডেনস্টাইন মতে উরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত কিরঘিজ তৃণভূমি অঞ্চলে ছিল আর্যদের আদি নিবাস।
3. হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার পার্থক্য উল্লেখ করাে।
অথবা
আর্য সভ্যতা ও হরপ্পা সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য কি?
উঃ হরপ্পা সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে নানা বিষয়েই পার্থক্য দেখা যায়।
1. হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা।
অন্যদিকে আর্য সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা।
2. বৈদিকযুগের লােকেদের ঘরবাড়ি ছিল বাঁশ ও খড়ের তৈরি।
অন্যদিকে মহেনজোদারাে ও হরপ্পার ঘরবাড়ি ছিল ইটের তৈরি ও নগরগুলি ছিল জনবহুল।
3. হরপ্পা সভ্যতা ছিল তা-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা,
অপরদিকে, বৈদিক সভ্যতা ছিল লৌহযুগের সভ্যতা।
4. হরপ্পার অধিবাসীদের ঘােড়ার ব্যবহার জানা ছিল না। তবে হয়তাে শেষের দিকে ঘােড়ার সঙ্গে হরপ্পাবাসীদের পরিচয় ঘটেছিল।
অন্যদিকে, বৈদিক আর্যদের যাযাবর জীবনে ঘােড়া ছিল অপরিহার্য।
5. হরপ্পা সভ্যতায় বৃষের সমাদর ছিল,
কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় গাভীর সমাদর করা হত।
6. হরপ্পা সভ্যতায় মৃতদেহের সমাধিস্থ করার নিয়ম ছিল। অন্যদিকে, বৈদিক সভ্যতায় মৃতের ক্রিয়া করা হত সৎকারের মাধ্যমে।
4. আর্যদের সমাজ জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো।
উঃ আর্যদের সমাজ জীবন :
1. পরিবার : পিতৃতান্ত্রিক ও একান্নবর্তী পরিবার ছিল ঋবৈদিক সমাজের ভিত্তি। পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হতেন পরিবারের কর্তা, যাকে বলা হত গৃহপতি’ বা কুলপতি।
2. নারীর মর্যাদা : পরিবারে সকলে পুত্র কামনা করলেও কন্যাসন্তান অনাদৃতা ছিল না। ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মে, সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে, বিদ্যাচর্চায় এমনকি যুদ্ধেও অংশ নিতেন তাঁরা। পৌলমী, ঘােষা, অপালা ও বিশ্ববারা ছিলেন অসামান্যা বিদুষী। জীবনসঙ্গী নির্বাচনে তাদের স্বাধীনতা ছিল, বাল্য বিবাহ বা বিধবা বিবাহ সমাজে প্রচলিত ছিল না।
3. জাতিভেদ প্রথা : ঋগবৈদিক যুগে দশম মণ্ডলে পুরুষসূক্ত স্তোত্রে চার বর্ণ—ব্রায়ণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের উদ্ভব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ থেকে কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক জাতিভেদের প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক ডি. ডি. কোশাম্বি, রােমিলা থাপার, এ. এল. ব্যাসামের মতে এসময় জাতিভেদ ছিল না, ছিল বর্ণভেদ। তাদের মতে বর্ণ ছিল গাত্র বর্ণের, তা জাতির সমার্থক ছিল না। কারণ কোনাে বর্ণের মানুষ যে-কোনাে বৃত্তি গ্রহণ করতে পারত, মিলিতভাবে আহার্য গ্রহণে কোনাে বাধা ছিল না, এমনকি একবর্ণের সঙ্গে অন্য বর্ণের বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপিত হত।
4. চতুরাশ্রম : ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য—এই তিনবর্ণের মানুষের জীবনকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছিল—
(i) ব্রহ্মচর্য—কৌমার্য রক্ষা করে গুরুগৃহে বিদ্যাচর্চা করা হত,
(ii) গার্হস্থ্য অর্থাৎ যৌবনে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালনের পর্যায়,
(iii) বানপ্রস্থ অর্থাৎ প্রৌঢ় অবস্থায় সাংসারিক বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঈশ্বরচিন্তায় কালযাপন এবং
(iv) সন্ন্যাস অর্থাৎ সংসার ত্যাগ করে পরিব্রাজকের জীবন গ্রহণ এবং ঈশ্বর চিন্তার পর্যায় ।
5. খাদ্য, পােশাক ও বিনােদন : দুধ, ঘি, ফলমূল, সবজি ও যব ছিল তাদের প্রধান খাদ্য। উৎসবের দিনে তারা মাংস ভক্ষণ করত এবং পান করত সুরা ও সােমরস। নাচগান, শিকার, রথচালনা, পাশাখেলা, মুষ্টিযুদ্ধ ছিল বিনােদনের বিষয়। সুতি, পশমি বস্ত্র ও অলংকার স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে পরিধান করত।
5. ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের বর্ণ প্রথা সম্পর্কে লেখ?
উঃ ঋক্বৈদিক সমাজে কর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারবর্ণের মানুষের কথা জানা যায়। ব্রাক্ষ্মণরা ছিলেন সমাজের সর্বোচ্চ শীর্ষে। তাদের কাজ ছিল যাগযজ্ঞ,অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা। এরপর ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা। ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল সাম্রাজ্য রক্ষা ও পরিচালনা এবং বৈশ্যদের কাজ ছিল কৃষিকাজ, ব্যাবসাবাণিজ্য ইত্যাদি। আর শূদ্ররা এই তিনবর্ণের মানুষের সেবা করত। পরবর্তী-বৈদিক যুগে সমাজ যখন রক্ষণশীল হয়ে পড়ে তখন সমাজে বর্ণপ্রথাও কঠোর অনুশাসনের বাঁধনে বাঁধা পড়ে।
6. বেদ কয়টি ও কি কি?
উঃ বেদ চারটি। যথা- ঋকবেদ, সামবেদ, যজুঃবেদ এবং অথর্ববেদ। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম বেদ হলো ঋকবেদ।
7. ঋক বৈদিক যুগে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে লেখ।
উঃ ঋকবৈদিক সমাজ পুরুষতান্ত্রিক হলেও কন্যা-সন্তান একেবারে অবহেলিত ছিল না। তারা সমাজে যথেষ্ট মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন। যেমন—ঋক্-বৈদিক যুগে মেয়েদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পুরুষের অভিভাবকত্বে থাকতে হত। বিবাহের আগে পিতা, বিবাহের পর স্বামীর আবার অবিবাহিত হলে ভাইয়ের অধীনে থাকতে হত। কিন্তু গৃহস্থালির ব্যাপারে নারী ছিলেন সর্বময় কত্রী এবং স্বামীর সহধর্মিণী। বিবাহের ক্ষেত্রে ঋকবৈদিক আর্য নারীরা স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তাদের একাধিক পতিগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। তখন বাল্যবিবাহ না হলেও বিধবাবিবাহ হত। তবে ঋগবেদে সহমরণ বা সতীদাহের উল্লেখ নেই। তখন নারীদের মধ্যে পর্দাপ্রথা না থাকায় তারা যুদ্ধে, সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ করত। মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে যজ্ঞানুষ্ঠানে অংশ নিত। সে-যুগে লােমশা, পৌলমী প্রমুখ নারী ধর্মীয় সাধনাতে লিপ্ত ছিলেন। আবার কেউকেউ বৈদিক স্তোত্র রচনায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ঋক-বৈদিক নারীরা উপযুক্ত শিক্ষালাভের সুযোগ পেতেন। উচ্চ শিক্ষিত নারী হিসাবে ও বৈদিক মন্ত্রের রচয়িতা হিসেবে ঘোষা, বিশ্ববারা আপালা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
8. আর্য সমাজে চতুরাশ্রম বলতে কী বোঝো?
উঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য—এই তিনবর্ণের মানুষের জীবনকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছিল—
(i) ব্রহ্মচর্য—কৌমার্য রক্ষা করে গুরুগৃহে বিদ্যাচর্চা করা হত,
(ii) গার্হস্থ্য অর্থাৎ যৌবনে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালনের পর্যায়,
(iii) বানপ্রস্থ অর্থাৎ প্রৌঢ় অবস্থায় সাংসারিক বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঈশ্বরচিন্তায় কালযাপন এবং
(iv) সন্ন্যাস অর্থাৎ সংসার ত্যাগ করে পরিব্রাজকের জীবন গ্রহণ এবং ঈশ্বর চিন্তার পর্যায় ।
এই চার প্রকার আশ্রমকে চতুরাশ্রম বলে।