আফ্রিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতি ও নদনদী জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

আফ্রিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতি ও নদনদী জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

আফ্রিকা মহাদেশের ছোট প্রশ্ন উত্তর
1. আফ্রিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতি কীরূপ ?
উত্তরঃ সামগ্রিকভাগে মহাদেশটি এক বিশাল ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমি।
2. ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী আফ্রিকা মহাদেশকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ?
উত্তরঃ ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী আফ্রিকা মহাদেশকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।
3. আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ মালভূমি অংশটির নাম কী ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ মালভূমি ইথিওপিয়ার।
4. সাহারা মালভূমি আফ্রিকার কোনদিকে অবস্থিত ?
উত্তরঃ সাহারা মালভূমি আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
5. আফ্রিকার উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কোনটি ?
উত্তরঃ আফ্রিকার উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমানজারাে।
6. সাহারা ছাড়া অন্য একটি মরুভূমির নাম করাে।
উত্তরঃ সাহারা ছাড়া অন্য একটি মরুভূমির নাম কালাহারি ।
7. শর্টস কাকে বলে ?
উত্তরঃ অ্যাটলাস পর্বতের লবণাক্ত জলের হ্রদকে বলে শর্টস।
8. অ্যাটলাস পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গের নাম কী ?
উত্তরঃ অ্যাটলাস পর্বতের উচ্চতম পর্বতের নাম জেবেল তৌবকাল ।
9. চেলিয়া কী ?
উত্তরঃ সাহারা অ্যাটলাস পর্বতের উল্লেখযােগ্য শৃঙ্গ।
10. পৃথিবীর দীর্ঘতম গ্ৰস্ত উপত্যকা কোনটি ?
উত্তরঃ পৃথিবীর দীর্ঘতম গ্ৰস্ত উপত্যকা দি গ্রেট রিফট ভ্যালি।
11. আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদের নাম কী ?
উত্তরঃ আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া ।
12. প্রবাহের দিক অনুসারে আফ্রিকার নদনদীকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ?
উত্তরঃ প্রবাহের দিক অনুসারে আফ্রিকার নদনদীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-(i) উত্তরবাহিনী, (ii) পশ্চিমবাহিনী, (iii) পূর্ববাহিনী।
13. পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীর নাম কী ? 
উত্তরঃ নীলনদ।
14. নীলনদের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছে ?
উত্তরঃ হােয়াইটনীল এবং বুনীলের মিলিত প্রবাহে নীলনদের সৃষ্টি হয়েছে।
15. আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য কী ?
উত্তরঃ এই মহাদেশের তিনটি অক্ষরেখাই বর্তমান, যা অন্য কোনাে দেশে দেখা যায় না।
16. আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল উষ্ণ কেন ?
উত্তরঃ নিক্ষরেখার ওপর সারা বছর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার জন্য আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল উষ্ণ।
17. আফ্রিকার মরুভূমির মরুদ্যানে কী কী ফসল জন্মায় ?
উত্তরঃ ধান, তরমুজ, পেঁয়াজ, খেজুর ইত্যাদি জন্মায়।
18. বাওবাব কী ?
উত্তরঃ বাওবাব আফ্রিকা মহাদেশের এক ধরনের গাছ, যে গাছের কাণ্ডে বৃষ্টির জল সঞ্চিত থাকে। ওই জল তৃষ্ণার্ত পথিকের পিপাসা মেটায়।
19. আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলে কী ধরনের বৃষ্টিপাত হয় ?
উত্তরঃ আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।
20. সাভানা কথার অর্থ কী?
উত্তরঃ সাভানা কথার অর্থ তৃণভূমি।
21. পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান নদীর নাম কী ?
উত্তরঃ পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান নদী নাইজার

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

1. আফ্রিকা মহাদেশে মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তরঃ জলবায়ুর তারতম্যের জন্য আফ্রিকা মহাদেশে বিশাল মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, এমনকি বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত বললে হয়, বছরে 12 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
2. ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী আফ্রিকার ভূপ্রকৃতিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ?
উত্তরঃ ভূপ্রকৃতিগত পার্থক্য অনুযায়ী আফ্রিকার ভূপ্রকৃতিকে চার ভাগে ভাগ করা হয় ; যথা-(i) পার্বত্য অঞ্চল, (ii) দক্ষিণ ও পূর্বের উঁচু মালভূমি অঞ্চল, (iii) মরু অধ্যুষিত মালভূমি অঞ্চল এবং (iv) উপকুলীয় সমভূমি অঞ্চল।
3. আফ্রিকা মহাদেশের জলবায়ুকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ও কী কী ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের জলবায়ুকে প্রধান, আট ভাগে ভাগ করা হয়। যথা নিম্নরূপ-
(1) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল
(2) উষ্ণ তৃণভূমি অঞ্চল
(3) উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চল
(4) মৌসুমি অঞ্চল 
(5) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল 
(6) নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চল
(7) চীনা জলবায়ু অঞ্চল 
(8) শীতল পার্বত্য অঞ্চল।

4. দি গ্রেট রিফট ভ্যালির পরিচয় দাও
উত্তরঃ পূর্ব আফ্রিকার ‘দি গ্রেট রিফট ভ্যালি’ হল একটি প্রধান উল্লেখযােগ্য ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। এই উপত্যকা উত্তর-দক্ষিণে প্রায় 6,440 কিমি বিস্তৃত। আফ্রিকার রুডলফ, ট্যাঙ্গানিকা, মিয়াস, এডওয়ার্ড অ্যালবার্ট প্রভৃতি বিখ্যাত হ্রদগুলাে এই উপত্যকায় দেখা যায়। লােহিত সাগর গ্রস্ত উপত্যকার অংশ বিশেষ। ভূমিকম্পের ফলে এই উপত্যকার সৃষ্টি। এই উপত্যকায় দক্ষিণ-পশ্চিম কালাহাক মরুভূমি অবস্থিত।

5. দক্ষিণ ও পূর্বের উঁচু মালভূমি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ দক্ষিণ আফ্রিকার এই মালভূমিটির বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উচ্চতার তারতম্য দেখা যায়। তবে এর গড় উচ্চতা পায় ১০০০ মিটার। এর দক্ষিণ দিকে মাউন্ট কেনিয়া, মাউন্ট কিলিমানজারাে, মাউন্ট রুসেঞ্চোরি পর্বত প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত কালাহারি মরুভূমি। এই পর্বত থেকে কতকগুলাে পাথুরের ধাপ নেমে গেছে। স্থানীয় ভাষায় একে কারু বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

6. আফ্রিকা মহাদেশের সমভূমি অঞ্চল সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের সমভূমির পরিমাণ খুবই কম। কেবলমাত্র নদী উপকূলীয় অবাহিকাগুলােতে সংকীর্ণ সমভূমি দেখা যায়। কঙ্গো, নীল, নাইজার, জাম্বােসি, অরেঞ্জ, লিম্পােপা ইত্যাদি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে সমভূমি গড়ে উঠেছে।

7. সাভানা তৃণভূমি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের নিরক্ষীয় বনভূমির উত্তরে ও দক্ষিণে ক্রান্তীয় জলবায়ু দেখা যায়। এই জলবায়ু অঞ্চলেই বিস্তীর্ণ সাভানা তৃণভূমি অঞ্চল। আর্দ্রতার তারতম্যের জন্য একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—আর্দ্র তৃণভূমি ও শুষ্ক তৃণভূমি। এখানে বড়াে বড়াে ঘাস জন্মায়, এলিফ্যান্ট গ্রাস এই তৃণভূমির মূল সম্পদ।
আফ্রিকার সুদান, চাদ, নাইজিরিয়া, ঘানা, গিনি, তানজানিয়া প্রভৃতি দেশ এই তৃণভূমির অন্তর্গত। এখানে শাল, সেগুন, বাবলা, কাঁটাযুক্ত গাছ জন্মায় এখানে বাওবাব নামে এক প্রকার গাছ জন্মায় যে গাছ থেকে পানীয় জল পাওয়া যায়।
8. আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে কোন পর্বতমালা কীভাবে অবস্থান করছে ?
উত্তরঃ আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে এটলাস পর্বতমালা পূর্ব-পশ্চিমে চারটি শ্রেণিতে বিস্তৃত রয়েছে। যেমন এন্টি-অ্যাটলাস, হাই-অ্যাটলাস, মধ্য-অ্যাটলাস ও রিফ-অ্যাটলাস।

9. আফিকার দক্ষিণের উল্লেখযােগ্য পর্বতগুলাে কী কী?
উত্তরঃ আফ্রিকার দক্ষিণের ভাঁজ পর্বতগুলাের মধ্যে স্টুয়ার্ট বার্জেন, লাঞ্জো বার্জেন উল্লেখযােগ্য। এদের মধ্যে গ্রেট কারু ও লিটল কারু নামে দুটি সংকীর্ণ উপত্যকা আছে।

10. পূর্ব আফ্রিকার বিশাল গ্ৰস্ত উপত্যকার ভৌগােলিক বিবরণ দাও।
উত্তরঃ এই বিশাল গ্রস্ত উপত্যকাটি ৩,৫০০ মাইল দীর্ঘ এবং দক্ষিণে মােজাম্বিক হতে উত্তরে লােহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে কতকগুলি আগ্নেয়গিরি অবস্থিত। এদের মধ্যে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারাে ৫,৭৯৬ মি), মাউন্ট এলপান (৪,২৫৩ মি), মাউন্ট কেনিয়া (৫,১১২ মি) উল্লেখযােগ্য। এই গ্রস্ত উপত্যকার গভীর অংশে কয়েকটি হ্রদ আছে ; যেমন—নিয়াস হ্রদ, ট্যাঙ্গানিকা হ্রদ, কিভু হ্রদ, এডওয়ার্ড হ্রদ, এলবার্ট হ্রদ, টানা হ্রদ ইত্যাদি। গ্রস্ত উপত্যকার পশ্চিমে উগান্ডা ও ট্যাঙ্গানিকা রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে মনােরম ভিক্টোরিয়া হ্রদ।
11. গ্রস্ত উপত্যকা কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভূআন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে দুটি চ্যুতির মাঝখানের অংশ বসে গিয়ে দুপাশে খাড়া ধার বিশিষ্ট যে সংকীর্ণ লম্বা নিম্নভূমির সৃষ্টি হয় তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে।

12. আফ্রিকার নদনদী ও হ্রদসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ আফ্রিকার প্রধান নদী নীলনদ (৬৬৫০ কিমি দীর্ঘ)। এই নীলনদ আফ্রিকার মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে ভিক্টোরিয়া এবং অ্যালবার্ট হ্রদ পার হয়ে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। হােয়াইট নীল, বুনীল, আটবারা প্রভৃতি নদনদী নদীর উপনদী। কঙ্গো নদী আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় প্রধান নদী। এই নদীটি
আফ্রিকা জম্বিয়াই উৎপন্ন হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। এই নদীতে অসংখ্য উপনদী ও কয়েকটি জলপ্রপাত দেখা যায়। এদের মধ্যে স্টানলি জলপ্রপাতটি উল্লেখযােগ্য। এছাড়া নাইজার, জাম্বেসি, অরেঞ্জ, লিমপােপাে নদী দেখা যায়। এগুলাে কোনােটি আটলান্টিক কোনােটি ভারত মহাসাগরে মিশেছে।
এখানে ট্যাঙ্গানিকা, রুডলফ, এডওয়ার্ড, অ্যালবার্ট, ভিক্টোরিয়া, কিভু, তুরকানা, তানজানিকা প্রভৃতি হ্রদ বিখ্যাত।

13. আফ্রিকা মহাদেশের প্রধান প্রধান হ্রদের নাম লেখাে।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বভাগে (পূর্ব আফ্রিকা) দক্ষিণ হতে উত্তরে বৃহৎ গ্রস্ত উপত্যকা অঞ্চলে কতগুলাে হ্রদ পরস্পর অবস্থান করছে। হ্রদগুলাের অধিকাংশই দৈর্ঘ্যে বড়াে এবং প্রস্থে সরু। নিয়াসা, টাঙ্গানিকা, অ্যালবার্ট, রুডলফ, টানা এবং ভিক্টোরিয়া হ্রদগুলাে দক্ষিণ হতে উত্তরে অবস্থিত। চাদ হ্রদ উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত। এখানে অ্যাটলাস পার্বত্য অঞ্চলে লবণাক্ত হ্রদ দেখা যায়। স্থানীয় ভাষায় এদের শর্টস বলে।
14. ম্যানগ্রোভ বনভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের যে সমস্ত নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে লবণাক্ত জল ও মাটির প্রভাবে যে বনভূমি গড়ে উঠেছে তাকে ম্যানগ্রোভ বনভূমি বলে। নাইজার, কঙ্গো, লিমপােপাে, জাম্বােসি প্রভৃতি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে এই ম্যানগ্রোভ বনভূমি দেখা যায়।

15. আফ্রিকা মহাদেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশে সারা বছর অত্যধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত এবং উত্তাপের জন্য এই অঞ্চলে বৃহৎ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই অরণ্যে বড়াে বড়াে গাছ জন্মায়। সারা বছর গাছপালায় সবুজ পাতা থাকে তাই এই অঞ্চলের মরুভূমিকে নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বনভূমি বলে। এখানকার বনভূমিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-(i) নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বনভূমি, (ii) গুল্ম লতা শ্রেণির উদ্ভিদ, (iii) উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনভূমি।
কঙ্গো নদীর অববাহিকায়, মেহগিনি, রােজউড, এবনি, রবার, কোকো, সিঙ্কোনা, পাম প্রভৃতি গাছ দেখা যায়। নীলনদ অববাহিকার দক্ষিণ অংশে চিরহরিৎ নিরক্ষীয় অরণ্য এবং পশ্চিমাংশে বিভিন্ন প্রকারের বড়াে বড়াে বা লম্বা কাঁটাজাতীয় গাছ ; যেমন—বাবলা, ক্যাকটাস প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

16. আফ্রিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতি বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ভূমির ভূপ্রকৃতি অনুসারে আফ্রিকা মহাদেশকে চারভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
(i) উত্তর-পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল।
(ii) দক্ষিণ ও পূর্বের উঁচু মালভূমি অঞ্চল।
(iii) মরু অধ্যুষিত মালভূমি অঞ্চল।
(iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল।

(i) উত্তর-পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলঃ আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে অ্যাটলাস পর্বতশ্রেণি। এটি ভঙ্গিল পর্বতের অন্তর্গত। একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—(i) টেল অ্যাটলাস, (ii) গ্রেট অ্যাটলাস, (ii) সাহারীয় অ্যাটলাস। এদের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার মিটার। উত্তরে টেল অ্যাটলাস, মধ্যভাগে গ্রেট অ্যাটলাস, মধ্যভাগে সাহারীয় অ্যাটলাস।
(ii) দক্ষিণ ও পূর্বের উঁচু মালভূমিঃ মহাদেশের দক্ষিণ ও পূর্বদিকের মালভূমি অঞ্চলের মধ্যে অনেক সৃপ পর্বত দেখা যায়। মালভূমির পূর্বদিকে যে গ্ৰস্ত উপত্যকা উত্তর-দক্ষিণে দেখা যায় তা পৃথিবীর মধ্যে সর্বপ্রধান এলবার্ট, এ্যাডওয়ার্ড, ট্যাঙ্গনাইকা। পৃথিবীর বিখ্যাত হ্রদগুলাে এই গ্ৰস্ত উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত। এখানকার পর্বতশ্রেণিগুলাের মধ্যে আবেসিনিয়ার, রুয়েনজারী, কিলিমানরােজ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। দক্ষিণে ডাকেনবার্ক পর্বত অবস্থিত। এরও দক্ষিণে অবস্থিত নিউভেল্ট ধাপে ধাপে সমুদ্র উপকূলের দিকে নেমে গেছে। এর বৃহৎ ধাপটির নাম গ্রেটকারী এবং দক্ষিণে ক্ষুদ্ৰ ধাপটি টিলটকারাে।
(iii) মরু অধ্যুষিত মালভূমি অঞ্চলঃ আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে রয়েছে মরু অধ্যুষিত মালভূমি অঞ্চল। এই অঞ্চলটি উত্তরে ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে দক্ষিণে কঙ্গো নদীর অববাহিকা এবং পূর্বে নীলনদ উপত্যকা, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে কয়েকটি অনুচ্চ পর্বত লক্ষ করা যায়। এখানেই অবস্থান করছে পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা মরুভূমি। এই সাহারা মরুভূমিতে অবস্থিত অহগ্নয় মালভূমি। পূর্ব মরুভূমিতে নীলনদ উপত্যকা অবস্থিত।
(iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞলঃ এই মহাদেশের চারদিকেই সমুদ্র উপকূল এবং উপকূলভাগ সংকীর্ণ। উত্তর অংশে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল এবং পশ্চিমাংশে উপকূলের উত্তরাংশ কিছুটা চওড়া। পূর্ব উপকূলে মাদাগাসকার দ্বীপ অবস্থিত।

17. আফ্রিকা মহাদেশের জলবায়ুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশে অধিকাংশ অঞ্চলই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রকৃতির অন্তর্গত। দিন এবং রাতের তাপমাত্রার তারতম্য লক্ষ করা যায়। দিনের বেলা যেমন গরম, রাতের বেলায় তেমন ঠাণ্ডা। অবশ্য গ্রীষ্ম ও শীতে তাপমাত্রা খুব একটা পার্থক্য থাকে না। জুলাই মাসে কখনাে কখনাে সাহারা
ও সােমালিয়ার স্থানে স্থানে তাপমাত্রা ৪৫° সেন্টিগ্রেডের ওপর দেখা যায়। উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে স্থানগুলাে বেশি শীতল। পূর্ব আফ্রিকার উচ্চভূমি ও দক্ষিণ আফ্রিকার কোনাে কোনাে স্থান আবার তুলনায় উষ্ণ। জানুয়ারি মাসে এখানে গড় তাপমাত্রা ২০° সেন্টিগ্রেডের নীচে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থানের জন্য সারা বছর পরিচলন বৃষ্টিপাত এবং বেশি উষ্ণতা এই মহাদেশের একটা বৈশিষ্ট্য। বৃষ্টিপাতের বণ্টনও অনিয়মিত। কোথাও টানা বৃষ্টি আবার কোথাও ৭-৮ বছর বৃষ্টি একেবারেই হয় না। পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ২০০-২৫০ সেন্টিমিটার। আবার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০-২৫ সেন্টিমিটার।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url