ল্যামার্কের মতবাদ কি? ল্যামার্কের মতবাদ ব্যাখ্যা করাে।
ল্যামার্কবাদ
উঃ ল্যামার্কের মতবাদ: ল্যামার্ক সর্বপ্রথম অভিব্যক্তির ওপর বিশ্লেষণী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। ল্যামার্কের তত্ত্বকে ল্যামার্কবাদ বলে।
ল্যামার্কবাদের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়গুলাে হল –
1. ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র: ল্যামার্কের মতে, পরিবেশের প্রয়ােজনে জীবদেহে কোনও নতুন অঙ্গের উৎপত্তি অথবা কোনও পুরানাে অঙ্গের অবলুপ্তি ঘটতে পারে।
তার মতে, যদি কোনও জীবের কোনও অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ক্রমাগত ব্যবহৃত হয়, তবে সেই অঙ্গ সবল ও সুগঠিত হয়। অন্যদিকে জীবের কোনও অঙ্গ পরিবেশের পক্ষে অপ্রয়ােজনীয় হলে ওই অঙ্গের আর ব্যবহার থাকে না। সুতরাং ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে অঙ্গটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয় এবং অবশেষে অবলুপ্ত
উদাহরণ – এক সময়ে সাপের পূর্বপুরুষের গিরগিটির মতাে চারটি পা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পায়ের ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে বর্তমান সাপের পা চারটি সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হয়েছে।
2. পরিবেশের প্রভাব এবং জীবের সচেষ্টতা: জীবের সহজাত প্রবৃত্তি হল পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা। তাই পরিবর্তনশীল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীবদেহে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। ল্যামার্কের মতে জীবের অর্জিত বৈশিষ্ট্য অনুসারে জীব স্বজ্ঞানে নিজের চেষ্টায় বিশেষ কোনও অঙ্গের বৃদ্ধি অথবা ক্ষয় করে বিবর্তনের ধারা পরিবর্তন করে।
উদাহরণ- উটপাখির পূর্বপুরুষদের সক্রিয় ডানা ছিল এবং তারা আকাশে উড়তে পারত, কিন্তু বংশানুক্রমে ডানার ব্যবহার না থাকায় সেটি এখন লুপ্তপায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
3. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ: ল্যামার্কের মতে, কোনও জীবের জীবনকালে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়, সেই সমস্ত বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে পরের জনুতে সঞ্চারিত হয়, অর্থাৎ অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে।
উদাহরণ- বহু বছর আগে জিরাফের গলা ছােটো থাকলেও বংশপরম্পরায় উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার জন্য তা ক্রমশ লম্বা হতে থাকে। লম্বা গলার এই বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হতে হতে আজকের লম্বা গলাওয়ালা জিরাফের সৃষ্টি।
4. নতুন প্রজাতির উৎপত্তি: ল্যামার্কের তত্ত্ব অনুযায়ী অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের জন্য প্রতিটি জনুতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ার ফলে প্রজাতির মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং ধীরে ধীরে অপর একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। ল্যামার্কের মতে এটাই হল বিবর্তনের মূল কারণ।