অক্ষাংশ ও উচ্চতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
অক্ষাংশ ও উচ্চতা বিষয়ে ছোট প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. কর্কটক্রান্তি রেখার অক্ষাংশ কত ?উত্তরঃ 23½° উত্তর।
2. মকরক্রান্তি রেখার অক্ষাংশ কত ?
উত্তরঃ 23½° দক্ষিণ ।
3. বায়ুর উষ্ণতা কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনাে স্থানের বায়ুর গরম বা ঠাণ্ডা অবস্থার পরিমাপকেই বায়ুর উষ্ণতা বলে।
4. বায়ুর উষ্ণতামাপক যন্ত্রের নাম কী ?
উত্তরঃ থার্মোমিটার।
5. পৃথিবীর যাবতীয় উষ্ণতার উৎস কী ?
উত্তরঃ সূর্য।
6. সূর্যকিরণ কীভাবে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় ?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সূর্যকিরণ ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়।
7. অক্ষাংশ কাকে বলে ?
উত্তরঃ অক্ষাংশ বলতে বােঝায় বিষুবরেখা হতে কোনাে স্থানের কৌণিক দূরত্ব।
8. বিষুবরেখার অক্ষাংশ কত ?
উত্তরঃ 90°।
9. কখন মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে ?
উত্তরঃ 21শে ডিসেম্বর তারিখে।
10. তির্যকভাবে সূর্যরশ্মি কোন স্থানকে উত্তপ্ত কম করে কেন ?
উত্তরঃ তির্যকভাবে সূর্যরশ্মি যে স্থানে পড়ে, সেই স্থানে ছড়িয়ে পড়ে বলে ওই স্থানকে উত্তপ্ত কম করে।
11. নিরক্ষরেখা থেকে প্রতি ডিগ্রি অক্ষাংশের পার্থক্যে বায়ুর উষ্ণতা কী হারে হ্রাস পায় ?
উত্তরঃ নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে প্রতি ডিগ্রি অক্ষাংশের পার্থক্যে 0.28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপ কম হতে থাকে।
12. পৃথিবীতে বছরে বিভিন্ন সময়ে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটে কেন ?
উত্তরঃ পৃথিবীর বার্ষিক গতি ও মেরুরেখার 66½° (ডিগ্রি) কোণে হেলানােভাবে অবস্থান করার জন্য।
13. কোন অঞ্চলে সারা বছরই দিন রাত্রি সমান হয় ?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে।
14. কোন অঞ্চলে সারা বছরই উষ্ণতা একই রকম থাকে ?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে।
15. কোন অঞ্চলে দিনের পরিমাণ বাড়লেও কিন্তু উত্তাপ বৃদ্ধি পায় না ?
উত্তরঃ মেরু অঞ্চলে।
16. কোন অঞ্চলকে নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চল বলে ?
উত্তরঃ কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে উত্তরে সুমেরু বৃত্ত এবং মকরক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিণে কুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত অঞ্চল নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল।
17. নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল কয় ভাগে বিভক্ত ?
উত্তরঃ দু ভাগে বিভক্ত—i) উত্তর ও (ii) দক্ষিণ নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল।
18. থার্মোমিটারে কয় প্রকারের স্কেল ব্যবহার করা হয় ?
উত্তরঃ দুই প্রকারের ফারেনহাইট ও সেন্টিগ্রেড।
19. কোনাে স্থানের তাপমাত্রা কীসের ওপর নির্ভরশীল ?
উত্তরঃ কোনাে স্থানের তাপমাত্রা ওই অঞ্চলের অক্ষাংশের ওপর নির্ভরশীল।
20. অক্ষাংশ বাড়লে তাপমাত্রার কী অবস্থা হয় ?
উত্তরঃ অক্ষাংশ বাড়লে তাপমাত্রা কমে যায়।
21. ভূপৃষ্ঠের উত্তাপের তারতম্য হয় কেন ?
উত্তরঃ পৃথিবীর আবর্তন, পরিক্রমণ এবং কক্ষতলের সঙ্গে মেরুরেখার 66½° কৌণিক দূরত্বে অবস্থানের ফলে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপের তারতম্য হয়।
22. তাপের তীব্রতা কোথায় বেশি হয় ?
উত্তরঃ সূর্যকিরণ নিরক্ষরেখায় লম্বভাবে পড়ে, তাই সেখানেই তাপের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয়।
23. কোন অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণ হয় ?
উত্তরঃ যে অঞ্চল নিরক্ষরেখার যত কাছে হয়, সে অঞ্চল সূর্যতাপ তত বেশি পায়। সুতরাং ওই অঞ্চলের জলবায়ু তত উষ্ণ হয়।
24. কোন অঞ্চলের জলবায়ু শীতল হয় ?
উত্তরঃ নিরক্ষরেখা হতে যে অঞ্চল যত দূরে অবস্থিত হবে সেই অঞ্চলের জলবায়ু তত শীতল হবে।
25. বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের নাম কি?
উত্তরঃ ট্রপােস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তর।
26. সাধারণত 1000 মিটার উচ্চতায় গড়ে প্রতি কত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা কমে ?
উত্তরঃ 6.4 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
27. উচ্চতার পার্থক্যের জন্য উষ্ণতার পার্থক্য হয় এমন একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং-এর মধ্যে উচ্চতার পার্থক্যের জন্য উষ্ণতার পার্থক্য হয়।
28. দিনের সঞ্চিত তাপ সবটা বিকীর্ণ হয় না কেন ?
উত্তরঃ যদি দিনের দৈর্ঘ্য বড়াে হয় এবং রাতের দৈর্ঘ্য ছােটো হয় তবে দিনের সঞ্চিত তাপ সবটা বিকীর্ণ হয় না।
29. পৃথিবীর কয়টি তাপমণ্ডল ?
উত্তরঃ তিনটি তাপমণ্ডল ; যথা-
(i) উষ্ণমণ্ডল
(ii) নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল
(iii) হিমমণ্ডল।
30. কোন সময় সূর্যরশ্মি কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে পড়ে ?
উত্তরঃ 21 শে জুন তারিখে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
1. হিমমণ্ডল কাকে বলে ?
উত্তরঃ 66½° উত্তর অক্ষরেখার উত্তর হতে উত্তর মেরুবিন্দু এবং 66½° দক্ষিণ অক্ষরেখার দক্ষিণ হতে দক্ষিণ মেরুবিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল দুটিতে সূর্যরশ্মি সর্বাপেক্ষা তির্যকভাবে পড়ে। মেরুবিন্দু দুটিতে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি থাকে। ফলে এই দুটি অঞ্চল শীতল। এই দুটি অঞ্চলকে হিমমণ্ডল বলে।
2. গ্রীষ্মমণ্ডল কাকে বলে ?
উত্তরঃ 0° হতে 23½° উত্তরে ও দক্ষিণে অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সূর্যের তাপ সবচেয়ে কম তির্যকভাবে পড়ে। এখানে শীত-গ্রীষ্মের পার্থক্য কম। এই অঞ্চলকে গ্রীষ্মমণ্ডল বলে।
3. নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল কাকে বলে ?
উত্তরঃ 23½° অক্ষাংশ থেকে 66½° অক্ষাংশ পর্যন্ত উভয় গােলার্ধে সূর্যরশ্মি কোনাে সময়ে লম্বভাবে পড়ে না। আবার খুব তির্যকভাবেও পড়ে না। এই অঞ্চলে উত্তাপ মধ্যম রকম। অঞ্চলটিকে নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল বলে।
4. বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি কী কী ?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি হল—
(i) অক্ষাংশের পরিবর্তন, (ii) উচ্চতার হ্রাস-বৃদ্ধি, (iii) সমুদ্র থেকে দূরত্ব, (iv) ভূমির ঢাল, (v) উম্ভ এবং শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাব, (vi) ভূপৃষ্ঠে আগত সৌররশ্মির পার্থক্য, (vii) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, (viii) ভূমিরূপের গঠন, (ix) গাছপালার অবস্থান, (x) নানাবিধ বায়ুপ্রবাহ।
5. বৈপরীত্য উত্তাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ অনেক সময় উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে এর বিপরীত ঘটনা ঘটে অর্থাৎ উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে রাতের বেলায় তাপ বিকিরণের ফলে বায়ু খুব ঠাণ্ডা ও ভারী হয়ে পড়ে। তখন এই শীতল ভারী বায়ু মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পর্বতের গাত্র বেয়ে ক্রমশ নীচের উপত্যকায় নেমে আসে, একে ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে। এর ফলে পর্বতের ওপরের অংশ অপেক্ষা নীচের উপত্যকা অংশে উষ্মতা বেশ কম হয়। বায়ুর এরূপ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস না পাওয়াকেই বায়ুমণ্ডলের বৈপরীত্য উত্তাপ বলে।
6. সমােষ্ণ রেখা কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠে এমন কতকগুলি স্থানের ওপর যে সব কাল্পনিক রেখা আঁকা হয়, যেখানে বছরের কোনাে এক সময় গড় উষ্ণতা সমান থাকে, ওই স্থানগুলির সংযােগকারী কল্পিত রেখাগুলিকেই সমােষ্ণ রেখা বলে। ভূপৃষ্ঠের তাপমণ্ডলগুলি সমােষ্ণ রেখার সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়।
7. উষ্ণতা হ্রাসের গড় কাকে বলে ?
উত্তরঃ সাধারণভাবে প্রতি এক হাজার মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6.4° (ডিগ্রি) তাপ কমে যায়। একে উষ্ণতা হ্রাসের গড় বলে। তবে উষ্ণতা সবসময় সমান। পরিমাণে কমে যায় না। দিন রাত্রিতে এবং ঋতু পার্থক্যে এর পার্থক্য হয়।
8. দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উষ্ণতার পার্থক্য কেন হয় ?
উত্তরঃ আমরা জানি উচ্চতার পার্থক্য অনুযায়ী উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়। দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ি একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও শিলিগুড়ি অপেক্ষা দার্জিলিং অনেক উঁচুতে অবস্থিত। তাই এরূপ পার্থক্য দেখা যায়। অর্থাৎ শিলিগুড়ির উষ্ণতা বেশি এবং দার্জিলিং-এর উষ্ণতা কম।
9. উচ্চ অক্ষাংশের থেকে নিম্ন অক্ষাংশের উষ্ণতা বেশি কেন ?
উত্তরঃ গােলাকার পৃথিবীতে সূর্যরশ্মি সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না। নিম্ন অক্ষাংশে লম্বভাবে এবং উচ্চ অক্ষাংশে তির্যকভাবে পড়ে। ফলে তির্যকভাবে পড়া স্থানে বেশি স্থান জুড়ে সূর্যরশ্মি ছাড়িয়ে পড়ে বলে এখানকার উত্তাপ কম হয়। আবার নিম্ন অক্ষাংশে লম্বভাবে পড়ার ফলে অল্প স্থান জুড়ে এক জায়গায় পড়ে, ফলে উষ্ণতা বেশি হয়।
10. সূর্যরশ্মি কীভাবে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে ?
উত্তরঃ সূর্যরশ্মি মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়ে। এই রশ্মির প্রভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠ উম্ভ হয় এবং পরে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে উত্তপ্ত করে। অর্থাৎ সূর্যরশ্মি সরাসরি বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে না।
বিকিরণ পদ্ধতি, পরিবহন পদ্ধতি, পরিচলন পদ্ধতি ও তাপশােষণ পদ্ধতির দ্বারা বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়।
11. অ্যালবেড়াে কাকে বলে ?
উত্তরঃ সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মির শতকরা 34 ভাগ বায়ুমণ্ডলে ভাসমান মেঘ, ধূলিকণা দ্বারা বিচ্ছুরিত ও প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে পুনরায় মহাশূন্যে ফিরে যায়। মহাশূন্যে ফিরে যাওয়া এই সূর্যরশ্মিকেই অ্যালবেডাে বলে।
12. পৃথিবীর তাপমণ্ডলগুলি কী কী ?
উত্তরঃ নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের দিকে উত্তাপ ধীরে ধীরে কমে যায় বলে অক্ষাংশ অনুসারে পৃথিবীর তাপমণ্ডলগুলিকে নিম্নরূপ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-(i) উষ্ণমণ্ডল, (ii) উত্তর ও দক্ষিণ নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল, (iii) উত্তর ও দক্ষিণ হিমমণ্ডল।
13. সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলতে কী বােঝাে?
উত্তরঃ মহাকাশে সূর্য অনবরত তাপ বিকিরণ করে চলেছে। এই বিকীর্ণ। তাপশক্তির কিছু অংশ পৃথিবীতে এসে পড়ে। সূর্য থেকে বিকীর্ণ তাপশক্তির যতটুকুই ভূপৃষ্ঠে এসে তাপে পরিণত হয় ওইটুকু তাপকেই সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলে। এই তাপীয় ফলের ওপর ভূপৃষ্ঠে নানা পরিবর্তন ঘটে। প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন নির্ভর করে।