বৃষ্টিপাতের কারণ ও প্রকারভেদ

বৃষ্টিপাতের কারণ ও প্রকারভেদ - অতি সংক্ষিপ্ত ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

বৃষ্টিপাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্ন

1. মেঘ কাকে বলে ?
উত্তরঃ বায়ুতে ভাসমান অসংখ্য জলকণার সমষ্টিকে মেঘ বলে।
2. বৃষ্টিপাত কীভাবে হয় ?
উত্তরঃ মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়।
3. নিরক্ষীয় অঞ্চলে কী ধরনের বৃষ্টিপাত হয় ?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।
4. কোন মেঘে বৃষ্টিপাত ঘটে ?
উত্তরঃ গাঢ় কালাে রঙের মেঘগুলি বেশি ভারী এবং ওরা আকাশের নীচু অংশে ভেসে বেড়ায়। এদের বলে বাদল মেঘ। এইরূপ মেঘে বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টি হয়।
5. জলবিন্দু কখন বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় ?
উত্তরঃ জলবিন্দু বায়ু অপেক্ষা ভারী হলে বৃষ্টিরূপে পৃথিবীতে পতিত হয়।
6. কীভাবে মেঘ জলবিন্দুতে পরিণত হয় ?
উত্তরঃ মেঘ খুব শীতল হলে জলকণাগুলি অধিকতর শীতল জলবিন্দুতে পরিণত হয়।
7. পরিচলন বৃষ্টিপাত কোন অঞ্চলে বেশি হয় ? কেন ?
উত্তর। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যের উত্তাপ ও জলীয় বাষ্প অধিক থাকায় ওই অঞলে পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
8. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয় ?
উত্তরঃ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতে, হিমালয়ের পাদদেশে, মেঘালয়ের খাসি-জয়ন্তীয়া পাহাড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হলে এই প্রকার বৃষ্টিপাত হয়।
9. পরিপৃক্ত বায়ু কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে বায়ুতে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা সবচাইতে বেশি থাকে তাকে পরিপৃক্ত বায়ু বলে।
10. বৃষ্টির জন্য উষ্ণতা কী কমে ?
উত্তরঃ হ্যা, বৃষ্টিপাত হলে উষ্ণতা কমে।
11. কোন বায়ুর জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা বেশি ?
উত্তরঃ উষ্ণ বায়ুর জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা বেশি।
12. কোন বৃষ্টিপাতে বজ্র-বিদ্যুৎ হয় ?
উত্তরঃ পরিচলন বৃষ্টিপাতে বজ্র-বিদ্যুৎ হয়।
13. কোন অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
14. প্রতিবাত ঢাল কাকে বলে ?
উত্তরঃ পাহাড়ের যে দিকে জলীয় বাষ্প ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে প্রতিবাত ঢাল বলে।
15. পশ্চিমঘাট পর্বতে বৃষ্টিচ্ছায় অঞল কোনদিক ?
উত্তরঃ পশ্চিমঘাট পর্বতে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল পূর্বদিক।
16. বৃষ্টিপাত কয় প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ বৃষ্টিপাত তিন প্রকার—(i) পরিচলন বৃষ্টি, (ii) শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি, (iii) ঘূর্ণবাত বৃষ্টি।
17. সংঘাত বৃষ্টি কোন অঞ্চলে দেখা যায় ?
উত্তরঃ নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে দেখা যায়।
18. ভাসমান জলকণা কার টানে পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়ে ?
উত্তরঃ ভাসমান জলকণা মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়ে।
19. বৃষ্টিচ্ছায় অঞল কাকে বলে ?
উত্তরঃ অনুবাত ঢালকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
20. সমবর্ষণ রেখা কাকে বলে ?
উত্তরঃ সমান বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানগুলােকে কল্পিত রেখা দ্বারা যােগ করলে মানচিত্রে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে সমবর্ষণ রেখা বলে ।
21. পরিচলন বৃষ্টিপাত কখন দেখা যায় ?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সন্ধ্যার সময় পরিচলন বৃষ্টিপাত দেখা যায়।
22. আমাদের দেশে সাধারণত শিলাবৃষ্টি কখন হয় ?
উত্তরঃ আমাদের দেশে কালবৈশাখীর সময় শিলাবৃষ্টি প্রায়ই দেখা যায়।
23. পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত কোথায় হয় ?
উত্তরঃ চেরাপুঞ্জির অনতিদূরে মৌসিনরামে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ প্রায় 1,250 সেমি।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

1. বৃষ্টিপাত প্রধানত কয় প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ বৃষ্টিপাত সাধারণত তিন প্রকার। যথা—(1) পরিচলন বৃষ্টি, (2) শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি, (3) ঘূর্ণিবৃষ্টি
2. পরিচলন বৃষ্টি কাকে বলে?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে (5° উত্তর অক্ষাংশ হতে 5° দক্ষিণ অক্ষাংশ) সূর্যের তাপ অধিক এবং জলভাগ অধিক উত্তপ্ত হওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণও অধিক হয়। ওই অঞ্চলের জলীয় বাষ্প ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হলে, বাদল মেঘের সৃষ্টি হয়।
এই মেঘ অধিক শীতল হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারা বছরই বর্জ-বিদ্যুৎসহ ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একে পরিচলন বৃষ্টি বলে।
3. প্রতিবাত ঢাল ও অনুবাত ঢাল কাকে বলে ?
উত্তরঃ পর্বতের যে ঢালে বৃষ্টি হয় তাকে প্রতিবাত ঢাল বা বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল এবং বিপরীত পাশে যে ঢালে বৃষ্টিপাত কম হয়, তাকে অনুবাত ঢাল বা স্বল্প বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল বলে।
4. বৃষ্টিচ্ছায় অঞল কাকে বলে ?
উত্তরঃ পর্বত অতিক্রম করে বায়ুপ্রবাহ পর্বতের পাশে পৌঁছেলে তাতে জলীয় বাষ্প কম থাকে বলে পর্বতের অনুবাত ঢালে বৃষ্টিপাত খুব কম হয় বা বৃষ্টিপাত আর হয় না। পর্বতের ওই বর্ষণবঞ্চিত পার্শ্বদেশকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে। আদ্র মৌসুমি বায়ু মেঘালয় মালভূমির খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, গারাে পাহাড়ের গায়ে বাধা পেয়ে ওই মালভূমির অন্তর্গত চেরাপুঞ্জি, মৌসিনরামে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু অপরপক্ষে অবস্থিত শিলং মালভূমি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে বৃষ্টিপাত কম।
5. শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি কাকে বলে ?
উত্তরঃ জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যদি কোনাে উঁচু পর্বতগাত্রে প্রতিহত হয়, তাহলে ওই বায়ু উপরে ওঠতে থাকে। পর্বতের উঁচু অংশে তুষার থাকলে তার সংস্পর্শে অথবা উর্ধ্বে উঠবার ফলে সেই বায়ু শীতল হলেই পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এইরূপ বৃষ্টিপাতের নাম শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি।
6. শিলাবৃষ্টি কাকে বলে ?
উত্তরঃ জলবিন্দু প্রবল ঝড়ের ঊর্ধ্বমুখী টানে নীচে না পড়ে অনেক সময় উঁচুতে উঠে যায় এবং হিমাঙ্ক থেকে কম উষ্ণতায় জমে ছােটো ছােটো বরফের ন্যায় পরিণত হয়। যখন বায়ুর উর্ধ্বমুখী বেগ কমে, তখন ওই বরফের ছােটো ছােটো গুটিগুলি বৃষ্টির সঙ্গে নীচে নামতে থাকে, বৃষ্টির সঙ্গে বরফ পড়াকে শিলাবৃষ্টি বলে।
7. ঘূর্ণিবৃষ্টি কাকে বলে ?
উত্তরঃ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রস্থলে নিম্নচাপ থাকে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু সেইদিকে আকৃষ্ট হয়ে উপরে উঠে যায় এবং শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এইরূপ বৃষ্টিকে ঘূর্ণিবৃষ্টি বলে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখীতে এই প্রকার বৃষ্টি হয়। উত্তর ও পশ্চিম ইউরােপেও ঘূর্ণিবৃষ্টি দেখা যায়।
8. কোন মেঘে বৃষ্টিপাত হয় ? কারণসহ লেখাে।
উত্তরঃ নিম্বাস মেঘে বৃষ্টিপাত হয়।
সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের জলাশয়ের জল বাষ্পে পরিণত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকে। ওই জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা বায়ুর সংস্পর্শে ছােটো ছােটো জলকণায় পরিণত হয়ে ধূলিকণার সঙ্গে জমাট বেঁধে মহাশূন্যে ভাসতে থাকে একে বলে মেঘ। এবার বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা হ্রাস পেলে অথবা অন্য জলীয় বাষ্প যুক্ত হলে এই মেঘ আরাে পুঞ্জীভূত হয়ে বড়াে বড়াে জলবিন্দুতে পরিণত হয়। তখন আর মহাশূন্যে ভাসতে পারে না এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ পৃষ্ঠে ঝরে পড়ে।
9. বৃষ্টিপাত কাকে বলে কয় প্রকার ও কি কি প্রকারগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ সূর্যের তাপে বিভিন্ন জলাশয় থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং শীতল ও ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় এবং আকাশে ভেসে বেড়ায় একে মেঘ বলে। এই জলকণাপূর্ণ মেঘ ধূলিকণার সঙ্গে জমাট বেঁধে ভারী হয়ে পড়ে, তখন আর আকাশে ভাসতে পারে না, মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় একে বৃষ্টিপাত বলে।
বৃষ্টিপাত তিন প্রকার-
i) পরিচলন বৃষ্টিপাত
(ii) শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং
iii) ঘূর্ণি বৃষ্টিপাত।

(i) পরিচলন বৃষ্টিপাত : নিরক্ষীয় অঞ্চলে (5° উত্তর অক্ষাংশ হতে 5° দক্ষিণ অক্ষাংশ) সূর্যের তাপ অধিক এবং জলভাগ অধিক উত্তপ্ত হওয়ায় ভূ-পৃষ্ঠ জলীয় বাষ্পের পরিমাণও অধিক হয়। ওই অঞ্চলের জলীয় বাষ্প উপরে উঠে শীতল
ও ঘনীভূত হলে, বাদল মেঘের সৃষ্টি হয়। মেঘ অধিক শীতল হলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারা বছরই বজ্র বিদ্যুৎসহ ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একে পরিচলন বৃষ্টি বলে ।

(ii) শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবাহিত হয়ে যদি কোনাে উঁচু পর্বতগাত্রে প্রতিহত হয়, তাহলে ওই বায়ু ওপরে উঠতে থাকে, পর্বতের উঁচু অংশে তুষার থাকলে তার সংস্পর্শে অথবা উর্ধ্বে ওঠবার ফলে সেই বায়ু শীতল হলেই পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এইরূপ বৃষ্টিপাতের নাম শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি।

(iii) ঘুর্ণ বৃষ্টিপাত: ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রস্থলে নিম্নচাপ থাকে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু সেই দিকে আকৃষ্ট হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরূপ বৃষ্টিকে ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত বলে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখীতে এই প্রকার বৃষ্টি হয়। উত্তর ও পশ্চিম ইউরােপেও ঘূর্ণবৃষ্টি দেখা যায়।

10. পরিচলন বৃষ্টিপাত ও শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উঃ পরিচলন বৃষ্টিপাত ও শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য গুলি হল- 
পরিচলন বৃষ্টিপাত শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত
(i) নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাত দেখা যায়। (i) পার্বত্য অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাত দেখা যায়।
(ii) গ্রীষ্মকালে এই বৃষ্টি হয়। (ii) বর্ষাকালে এই বৃষ্টি হয়।
(iii) নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডলের অন্তর্গত অঞ্চলে এই বৃষ্টি হয়। (iii) পাহাড়-পর্বতের প্রতিবাত ঢালে এই বৃষ্টিপাত হয় ।
(iv) সাধারণত সন্ধ্যার সময় এই বৃষ্টিপাত ঘটে। (iv) জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হলেও যে কোনাে সময় বৃষ্টিপাত ঘটে।
(v) নিম্নচাপ ও আয়ন বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত ঘটে। (v) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত ঘটে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url