সর্বশিক্ষা অভিযান রচনা

সর্বশিক্ষা অভিযান রচনা

ভূমিকা

মানুষের জন্মের পর থেকে জ্ঞানের বিকাশ হতে শুরু করে। শিক্ষা মানুষকে সেই জ্ঞানের পথ দেখায়। শিক্ষাতো সত্যই চেতনা আনে, আর চেতনা ঘটায় বিপ্লব। এই বিপ্লব নিঃসন্দেহে মনের বিপ্লব। জ্ঞানের আলো ও ভাবের বিকাশের জন্য নবীন মন সব সময়ই থাকে উন্মুখ। শিক্ষা তাই মানুষের অন্তর্নিহিত জ্ঞানের বিকাশে সাহায্য করে এবং তার জ্ঞানের আলো আরও প্রজ্বলিত করে নিঃসন্দেহে।

সার্বিক বিকাশে সর্বশিক্ষা অভিযান

সর্বশিক্ষা অভিযান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, সমাজের সার্বিক উন্নতিতে এই অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই অভিযান সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ এনে দিয়েছে। আর নিরক্ষরতা দূরীকরণে এই অভিযান বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে।

মাতৃভাষার গুরুত্ব

সর্বশিক্ষা অভিযানে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মাতৃভাষাই কিন্তু শিক্ষার সর্বাপেক্ষা সহায়ক মাধ্যম হতে পারে। বাংলার মানুষ—তার মাতৃভাষা ব্যতীত কখনও তার শিক্ষাকে পূর্ণ করতে পারে না। অতএব সর্বশিক্ষা অভিযানের ভাষার মাধ্যম যেহেতু মাতৃভাষা তাই তা আপামর জনসাধারণের শিক্ষার পথকে সহজ ও সুগম করে তুলছে। নিজ মাতৃ ভাষায় শিক্ষালাভ করলে নিজেকে জ্ঞানদৃপ্ত করে তোলা যায়, যে-কোনো বিষয়কে সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া যায়। জীবনে তা কাজেও লাগানো যায়। সর্বশিক্ষা অভিযানের মূল বক্তব্যও তাই, সে-কারণেই এই অভিযান শিক্ষাক্ষেত্রে আরও কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলে আশা করা যায়।

মানবিক বিকাশ

মানবিক বিকাশই মানুষকে যথার্থ মুক্তির পথ দেখায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে মানুষকে তাই অজ্ঞানতার জগৎ থেকে জ্ঞানের আলোকে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করছে। তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করছে। সর্বশিক্ষা অভিযান সমাজের অনাদৃত মানুষকে আদৃত করতে শেখায়, তাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে এনে দেবার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে শেখায়।

কুসংস্কার ও বিজ্ঞান

সর্বশিক্ষা একটি এমন শিক্ষা অভিযান যা শুধু মানুষকে শিক্ষা দান করে না, বিজ্ঞানমনস্ক একজন পূর্ণ নাগরিক গড়ে তোলার প্রয়াস করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রসার ঘটাতে চাইছে, তখন এই সরকারেরই একটি শাখা ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ’ জেলায় জেলায় বিজ্ঞানমনস্ক মনোভাব গড়ে তোলার সর্বাঙ্গীন প্রয়াস চালাচ্ছে।

উপসংহার

বহু শতাব্দীর জমানো স্তূপীকৃত আবর্জনায়, আমাদের চলার পথ যখন মন্থর ও শ্লথ, যখন কোনও দুর্ঘটনার কার্য-কারণ সম্পর্ক নির্ধারণে আমরা অক্ষম, সত্য-মিথ্যার যাচাই যখন আমরা করতে পারি না, তখন একমাত্র বিজ্ঞান ভাবনাই পারে সেই তমসতাকে নাশ করতে। বিজ্ঞানমনস্ক হবার জন্য বিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই, যেন বিজ্ঞানবোধের উন্মেষ ঘটে আমাদের চিত্তে আমাদের মননে, চিন্তনে। সর্বশিক্ষার মাধ্যমে সকলের শিক্ষা ও এই যুক্তিবাদী চিন্তা ঘটবে আশা করা যায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url