উপসর্গ কাকে বলে এবং উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি? উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য কি?

উপসর্গ ও উপসর্গের প্রকারভেদ ও উদাহরণ

উপসর্গ কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয়গুলি ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে ধাতু বা শব্দকে অবলম্বন করে নতুন শব্দ গঠন করে এবং অর্থের পরিবর্তন ঘটায় সেই অব্যয়গুলিকে উপসর্গ বলে।
যথা- প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দুর, বি, অধি, সু, উদ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ, নিস, দুস।
এই উপসর্গ গুলি ধাতুর আগে যুক্ত হলে কোনো শব্দের বিপরীত শব্দ তৈরি হয় অথবা অর্থের উৎকর্ষ বা সংকোচন হয়।
'উপ, প্র, পরি' এগুলি উপসর্গ এবং 'হার' একটি শব্দ এই শব্দের আগে উপসর্গ যুক্ত হলে নতুন শব্দ গঠন হবে যথা- উপহার, প্রহার, পরিহার

উপসর্গ কথার অর্থ কি?

উঃ উপসর্গ কথার অর্থ হল উপসৃষ্ট। এর কাজ হল নতুন শব্দ সৃষ্টি করা।

উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি?

উঃ উপসর্গ তিন প্রকার যথা-
i) সংস্কৃত উপসর্গ
ii) বাংলা উপসর্গ
iii) বিদেশি উপসর্গ

সংস্কৃত উপসর্গ কাকে বলে এবং কয়টি?

উঃ সংস্কৃত ভাষায় ধাতু বা নাম শব্দের আগে যে অব্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে তাকে সংস্কৃত উপসর্গ বলে।
সংস্কৃত উপসর্গ 20 টি‌। যেমন-
প্র, পরা, অপ, উপ, সম, নি, অব, অনু, নির,  বি, অধি, সু, উৎ, দুর, পরি, প্রতি, অভি, অতি, আপ, আ।

বাংলা উপসর্গ কাকে বলে এবং কয়টি?

উঃ বাংলা ভাষায় বিশেষ্য বা বিশেষণের অথবা ধাতু বা শব্দের আগে যে উপসর্গ ব্যবহৃত হয় তাকে বাংলা উপসর্গ বলে।
বাংলা উপসর্গ 21 টি। যথা-
অ, আ, অনা, আন, আত, আজ, আব, অঘা, ইতি, ওন, কদ, কু, নি, পাতি, বি, রাম, তব, সু, স, সা, হা।

বিদেশি উপসর্গ কাকে বলে?

উঃ বাংলা ভাষায় যেসব উপসর্গ বিদেশী ভাষা থেকে এসেছে এবং ধাতু বা শব্দের আগে না বসে বিশেষ্য বা বিশেষণের পূর্বে বসে তাদের বিদেশি উপসর্গ বলে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশি উপসর্গগুলি মধ্যে আরবি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু উপসর্গগুলি বেশি ব্যবহার হয়। যেমন-
আরবি উপসর্গ
আরবি উপসর্গ গুলি হল- আম, খাস, লা, গর
আম (সাধারণ অর্থে ) - আমদরবার
খাস (বিশেষ) - খাসমহল, খাসখবর, খাসদরবার
লা ( না) - লাপাত্তা, লাজওয়াব
গর ( অভাব) - গরমিল, গররাজি
ইংরেজি উপসর্গ
ইংরেজি উপসর্গ গুলি হল- ফুল, হাফ, হেড, সাব
ফুল ( পূর্ণ অর্থে)- ফুলপ্যান্ট, ফুলপ্যান্ট, ফুলশার্ট
হাফ ( অর্ধেক) - হাফপ্যান্ট, হাফস্কুল, হাফহাতা
হেড ( প্রধান) - হেডমাস্টার, হেডঅফিস
সাব ( অধীন) - সাব-ইন্সপেক্টর, সাব-অফিস
ফরাসি উপসর্গ
ফরাসি উপসর্গ গুলি হল- কার, দর, নিম, না, ফি, বদ, বে, বর, ব, কম
কার ( কাজ অর্থে)- কারখানা, কারসাজি, কারচুপি
দর (অধীন)- দরপাট্টা, দরদালান
নিম ( আধা) - নিমরাজি
না ( না) - নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ
ফি ( প্রতি) - ফি-মাস, ফি-বছর
বদ ( মন্দ) - বদমাশ, বদনাম
বে ( না) - বেকায়দা, বেআক্কেল, বেকায়দা, বেকার
বর ( বাইরে, মধ্যে) - বরখাস্ত, বরদাস্ত, বরবাদ
ব ( সহিত) - বকলম, বনাম
কম ( অল্প) - কমজোর
উর্দু ও হিন্দি উপসর্গ
উর্দু ও হিন্দি উপসর্গ গুলি হল- হর
হর (প্রত্যেক) - হরহামেশা, হরেক

উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য কি?

উঃ উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য গুলি হল-
উপসর্গ অনুসর্গ
1. বাংলা উপসর্গে এ ব্যাপারে সামান্য ব্যতিক্রম দেখা যায়। 1. বিশেষ্য ও অসমাপিকা ক্রিয়া-পদেও অনুসর্গ থাকে।
2. ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে অর্থের পরিবর্তন ঘটায়। 2. বিশেষ্যপদের বা সর্বনামপদের পরে বসে শব্দ-বিভক্তির কাজ করে।
3. উপসর্গ ধাতু বা শব্দের সঙ্গে মিশে একটি শব্দে পরিণত হয়। 3. বাক্যমধ্যে পৃথকভাবে বসে।
4. স্বতন্ত্র প্রয়োগ নেই। —হয় না। 4. স্বতন্ত্র প্রয়োগ হতে পারে।
5. ধাতু বা শব্দের পূর্বে অবস্থান। উদাহরণ : পরা—পরাজিত, পরাক্রম আ—আহার 5. পদের পরে অবস্থান। উদাহরণ : আকাশের দিকে তাকাও। গাছ থেকে ফল পড়ে।

উপসর্গ পদের কোথায় বসে? উপসর্গের কাজ কী? উপযুক্ত উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর : সংস্কৃত উপসর্গ ধাতুর আগে বসে আর বংলা ও বিদেশি উপসর্গ শব্দের আগে বসে।
সংস্কৃত উপসর্গ ধাতুর আগে বসে ধাতুর অর্থের পরিবর্তন ঘটায় আর বাংলা ও বিদেশি উপসর্গ শব্দের আগে বসে শব্দের অর্থের নানা রূপান্তর ঘটায়।
√ কৃ + অ = কার
কিন্তু প্র- √ কৃ + অ = প্রকার-এর অর্থ রকম।
আবার আ- √ কৃ + অ = আকার-এর অর্থ আকৃতি।
অতএব দেখা গেল √ কৃ ধাতুর অর্থ করা হলেও তার আগে বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়ে ধাতুর প্রকৃত অর্থের পরিবর্তন ঘটেছে।
আবার ‘সৃষ্টি’ শব্দের আগে বাংলা উপসর্গ ‘অনা’ যোগ করলে হয় ‘অনাসৃষ্টি’ এবং ‘মিল’ শব্দের আগে ‘গর’ বিদেশি উপসর্গ যোগ করলে হয় ‘গরমিল’। এক্ষেত্রে মূল শব্দের অর্থ উপসর্গ যোগ করার পর সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে গেল।

নীচের যে-কোনো চারটি উপসর্গ যোগে চারটি শব্দ তৈরি করো এবং আলাদা আলাদা বাক্য গঠন করো।

অপ, অব, অধি, বে, উৎ, অনা।
উত্তর : 
অপ—অপকার: কারও অপকার করতে নেই।
অব—অবরোধ: সৈন্যরা নগর অবরোধ করল।
অধি—অধিবাস: আজ গোবিন্দ ঠাকুরের অধিবাস হবে।
বে—বেদখল: জায়গাটা বেদখল হয়ে গেল।
উৎ—উন্নয়ন: আমরা সবাই দেশের উন্নয়ন চাই।
অনা—অনাসৃষ্টি : রাজ্যে অনাসৃষ্টি চলছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url