পরিপাক কাকে বলে? পরিপাক গ্রন্থি কয়টি ও কী কী এবং শ্বসন ও পরিপাকের মধ্যে পার্থক্য

পরিপাক কাকে বলে? পরিপাক গ্রন্থি কয়টি ও কী কী এবং শ্বসন ও পরিপাকের মধ্যে পার্থক্য

পরিপাক কাকে বলে?
যে প্রক্রিয়ায় প্রাণীদেহে গৃহীত অদ্রবণীয় কঠিন ও জটিল খাদ্য বিভিন্ন উৎসেচকের দ্বারা দ্রবণীয় সরল ও তরল খাদ্যে পরিণত হয়ে জীবদেহে শােষণ ও আত্তীকরণের উপযােগী হয়, তাকে পরিপাক (Digestion) বলে।
অথবা
আমরা যে সব জটিল খাদ্য (কার্বোহাইড্রেট, প্রােটিন, ফ্যাট) গ্রহণ করি তা পরিপাক নালিতে গিয়ে বিভিন্ন উৎসেচকের সাহায্যে সরল খাদ্যে পরিণত হয়। জটিল খাদ্য সরল খাদ্যে পরিণত হওয়াকে বলে পরিপাক বা ডাইজেশন (Digestion)।
পরিপাক স্থান- মুখবিবর, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র।
পরিপাকগ্রন্থি গুলি হল- লালাগ্রন্থি, পাকগ্রন্থি, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয় এবং আন্ত্রিক গ্রন্থি।
প্রাণী দেহের পরিপাক সাধারণত দুই প্রকার যথা- 
1. অন্তঃকোশীয় পরিপাক
2. বহিঃকোশীয় পরিপাক 
অন্তঃকোশীয় পরিপাক কাকে বলে?
উঃ কোশের মধ্যে উৎসেচকের সাহায্যে যে পরিপাক হয় তাকে অন্তঃকোশীয় পরিপাক বলে।
যেমন- অ্যামিবার খাদ্য পরিপাক
বহিঃকোশীয় পরিপাক কাকে বলে?
উঃ কোশের বাইরে উৎসেচকের সাহায্যে যে পরিপাক হয় তাকে বহিঃকোশীয় পরিপাক বলে।
যেমন- মানুষ, ব্যাঙ, কেঁচো, আরশোলা ইত্যাদি প্রাণীদের পৌষ্টিক নালীতে পরিপাক সম্পন্ন হয়।
ব্যতিক্রম: হাইড্রার দেহে অন্তঃকোষীয় ও বহিঃকোষীয় উভয় পরিপাক ঘটে।
পরিপাক গ্রন্থি কয়টি ও কী কী?
উঃ পরিপাক গ্রন্থি 5 টি যথা- লালাগ্রন্থি, পাকগ্রন্থি, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয় এবং আন্ত্রিক গ্রন্থি।
টায়ালিন এর কাজ কি?
উঃ মুখবিবরে খাবার চিবোনোর সময় খাবারের সঙ্গে  লালা রস মিশে যায়। লালারসে টায়ালিনমল্টেজ দুটি উৎসেচক থাকে।
টায়ালিন সেদ্ধ শ্বেতসারকে মল্টেজে পরিণত করে।
                টায়ালিন
শ্বেতসার ----------------> মল্টেজ
মল্টেজ এর কাজ কি?
উঃ মল্টেজ মলটোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে।
               মলটেজ
মলটোজ --------------> গ্লুকোজ
পাকস্থলীতে কোন এসিড থাকে?
উঃ লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ( HCL)
গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি কোথায় থাকে?
উঃ পাকস্থলীর প্রাচীরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থাকে।
পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে কোন উৎসেচক উৎপন্ন হয়?
উঃ পেপসিন।
পেপসিন এর কাজ কি?
উঃ পেপসিন প্রোটিনকে পেপটোনে পরিণত করে।
             পেপসিন
প্রোটিন ---------------> পেপটোন
                HCL
লাইপেজ এর কাজ কি?
উঃ লাইপেজ ফ্যাটকে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।
          লাইপেজ
ফ্যাট ----------------> ফ্যাটি অ্যাসিড + গ্লিসারল।

শ্বসন ও পরিপাকের মধ্যে পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য শ্বসন পরিপাক
1. সংজ্ঞা 1. অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচক এর সাহায্যে গ্লুকোজ জারিত হয়ে সরলতম অংশে বিশিষ্ট হয় এবং খাদ্য স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত বা মুক্ত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে তাকে শ্বসন বলে। 1. জটিল খাদ্য-বস্তু প্রধানত উৎসেচকের সাহায্যে সরল, তরল শােষণযােগ্য খাদ্যরসে পরিণত হাওয়াকে পরিপাক বলে।
2. সংঘটন স্থল 2. এই প্রক্রিয়া সমস্ত সজীব কোশে ঘটে। 2. এই প্রক্রিয়া কোশের ভিতরে বা বাইরে ঘটতে পারে।
3. প্রক্রিয়ার সময় 3. শ্বসন দিবারাত্রি ঘটে। 3. খাদ্য গ্রহণের সময় পরিপাক হয়।
4. গ্লুকোজ 4. শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত হয়। 4. পরিপাকের ফলে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়।
5. পর্যায় 5. শ্বসনের প্রধান পর্যায় দুটি হল- 1. গ্লাইকোলাইসিস এবং 2. ক্রেবস চক্র 5. পরিপাকের পর্যায় বা পদ্ধতি গুলো হল 1. মুখবিবর 2. পাকস্থলী এবং 3. ক্ষুদ্রান্ত।
....
বিপাক ও পরিপাকের পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য বিপাক পরিপাক
1. প্রক্রিয়া 1. সজীব কোশের প্রােটোপ্লাজমে গঠনমূলক বা ভাঙনমূলক জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি সংঘটিত হয়। 1. জটিল খাদ্য-বস্তু প্রধানত উৎসেচকের সাহায্যে সরল, তরল শােষণযােগ্য খাদ্যরসে পরিণত হয়।
2. সংঘটন স্থল 2. এই প্রক্রিয়া কেবলমাত্র সজীব কোশের ভিতরেই ঘটে। 2. এই প্রক্রিয়া কোশের ভিতরে বা বাইরে ঘটতে পারে।
3. শক্তির নির্গমন 3. বিপাকের সময় শক্তি নির্গত হতে পারে। 3. পরিপাকের সময় শক্তি নির্গত হয় না।
আরো পড়ুন-
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url