স্বদেশী আন্দোলনের কারণ

স্বদেশি আন্দোলনের কারণ কি?

স্বদেশি আন্দোলন
উনবিংশ শতকের শেষ ভাগ থেকেই জাতীয় কংগ্রেসের মডারেট বা নরমপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের নানান দুর্বলতা ফুটে উঠতে থাকলে জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়।
 স্বদেশি আন্দোলনের কারণ :
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী আন্দোলনের প্রতি অরবিন্দ ঘােষ, লােকমান্য তিলক, লালা লাজপত রায় প্রমুখ চরমপন্থী নেতাদের সমালােচনাপূর্ণ (Critique) দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের উদ্ভবের
প্রধান কারণ।
1. ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক শােষণ 
2. প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির সময় সরকারি উদাসীনতা
3. জনবিরােধী স্বৈরাচারী আইন প্রবর্তন 
4. বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, দয়ানন্দ সরস্বতীর দেশাত্ববােধমূলক বলিষ্ঠ রচনা 
5. জাপানের কাছে রাশিয়ার পরাজয় এবং আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, চিন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের সংগ্রামী কার্যকলাপ প্রভৃতি ছিল সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তথা স্বদেশি আন্দোলনের উদ্ভবের অন্যতম কারণ।

সর্বোপরি, এই সময়ে লর্ড কার্জনের স্বৈরাচারী নীতি সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদকে দানা বাঁধতে সাহায্য করেছিল। কলকাতা কর্পোরেশন আইন (1899 খ্রি.), ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন (1904 খ্রি.) প্রভৃতি স্বৈরাচারী ও প্রতিক্রিয়াশীল আইন পাস করে তিনি শিক্ষিত ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন ও শিক্ষার অধিকার খর্ব করেছিলেন বলে তাঁর প্রতিক্রিয়াশীল শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষের চাপা আগুন জ্বলছিল। এর মধ্যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির জন্য 1905 খ্রিস্টাব্দের 16ই জুলাই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে, স্বদেশি আন্দোলনের প্রধান না হলেও প্রত্যক্ষ কারণ ছিল বঙ্গভঙ্গ

1. বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলা তথা ভারতে যে উগ্র জাতীয়তাবাদী গণআন্দোলন দেখা দেয়, তা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বা স্বদেশি আন্দোলন নামে পরিচিত। স্বদেশি আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে নরমপন্থী। সুরেন্দ্রনাথ এবং পরবর্তী সময়ে চরমপন্থী বিপিনচন্দ্র পাল ও অরবিন্দ ঘােষ নেতৃত্বদান করেন।
2. বঙ্গভঙ্গের ঘােষণাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সর্বত্র বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন শুরু হয়। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বেঙ্গলি পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গকে ‘এক গুরুতর জাতীয় বিপর্যয়’ বলে মন্তব্য করেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বাংলার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে প্রায় দুই হাজার সভা অনুষ্ঠিত হয়।
3. 1905 সালের 16ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন দ্বিখণ্ডিত বাংলার যুক্ত প্রতীক হিসাবে কলকাতার ‘ফেডারেশন হলের' ভিত্তি স্থাপিত হয়। ওই দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শে জাতিধর্মনির্বিশেষে একে অপরের হাতে ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসাবে রাখি বাঁধে। বাংলার ঘরে ঘরে অরন্ধন পালিত হয়।

4. কিন্তু শুধুমাত্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের টনক নড়ানাে অসম্ভব বিবেচনা করে, আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বয়কট অর্থে শুধুমাত্র বিলেতি বস্ত্র বা পণ্যসামগ্রীই নয়, বিলিতি চিন্তাধারা, আদবকায়দা সব কিছুই বর্জন করার আদর্শ প্রচার করেন। বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিই ছিল এর মূল লক্ষ্য।

5. বয়কটের পরিপূরক হিসেবে স্বদেশি চিন্তাধারারও বিকাশ ঘটে। স্বদেশি’র অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, কেবল স্বদেশি দ্রব্যই নহে, সর্বপ্রকার বিদেশি আদর্শের পরিবর্তে জাতীয় ভাষা,সাহিত্য, শিক্ষাপদ্ধতি এবং রাজনৈতিক আদর্শ, লক্ষ্য ও পন্থা জনগণের মনে প্রভাব বিস্তার করে। বস্তুত স্বদেশি ও বয়কট এই দুই কর্মপন্থা অবলম্বন করে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা সার্বিকভাবে স্বদেশি আন্দোলন নামে পরিচিত।

উপরে বর্ণনা থেকে কয়েকটি প্রশ্ন হতে পারে-
1. স্বদেশী আন্দোলন কাকে বলে?
2. কয়েকজন চরমপন্থী নেতার নাম বলো।
3. কয়েকজন নরমপন্থী নেতৃবৃন্দ নাম কি?
4. বেঙ্গলি পত্রিকার লেখক কে?
5. কোন দিনে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়?

আরো পড়ুন- 
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous September 14, 2023 at 7:34 AM

    𝓜𝓲𝓬𝓱𝓪𝓮𝓵

Add Comment
comment url