অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ , প্লাবনভূমি, গিরিখাত ও বদ্বীপের সৃষ্টি যে ভাবে হয়েছে
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, প্লাবনভূমি, গিরিখাত ও বদ্বীপের সৃষ্টি
উত্তরঃ নদী গতিপথে কোথাও বাধা পেলে একটু বেঁকে যায়। ধীরে ধীরে এই বাঁক বড়াে হতে থাকে। বাঁক বেশি বড়াে হয়ে গেলে নদী তখন সােজা পথ ধরে প্রবাহিত হয় এবং নদীর পরিত্যক্ত খাত হ্রদের আকার ধারণ করে। এই বিচ্ছিন্ন
অংশের সঙ্গে প্রথম দিকে নদীর কিছুটা সম্পর্ক থাকে এবং বন্যার সময় এতে নদীর জল প্রবেশ করে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হ্রদ নদী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে অশ্বের ক্ষুরের মতাে বাঁকাভাবে অবস্থান করে বলে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে ।
2. জলপ্রপাত কীভাবে সৃষ্টি হয় বর্ণনা করাে।
উত্তর: নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলাস্তর পরপর থাকলে নরম শিলাস্তর অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি ক্ষয় হতে থাকে। কঠিন শিলাস্তর উঁচুতে থেকে যায় এবং কোমল স্তরের ক্ষয় বিশিষ্ট অংশ নীচু হয়, আর নদীস্রোত উপর হতে প্রবল বেগে নীচে পড়তে থাকায় জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। ভারতের নর্মদা নদীর গতিপথে জব্বলপুরের নিকট মার্বেল পাথরের উপর হতে ধুয়াধর জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে। কানাডার সেন্ট লরেন্স নদীর নায়েগ্রা জলপ্রপাত বিশ্ববিখ্যাত। পার্বত্য প্রবাহে নদীর জলপ্রপাত ও খরস্রোতের সাহায্যে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।
3. প্লাবনভূমি কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ মধ্যগতিতে নদী উপত্যকা বিশাল চওড়া আকার ধারণ করে। কিন্তু পলি বয়ে নিয়ে যাবার ক্ষমতা না থাকায় নদীখাতে পলি জমে উপত্যকা অগভীর হতে থাকে। অগভীর খাতে বর্ষার জলের পরিমাণ বেশি হলে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার জলে উপত্যকা অঞল ডুবে গিয়ে পুনরায় নতুন পলি সঞ্চিত হতে হতে নদীর মােহনায় প্লাবনভূমির সৃষ্টি করে। নদীর উভয় তীরও পলি নদী উপত্যকার প্লাবনভূমির প্রকৃতি সঞ্চয়ের ফলে বাঁধের মতাে উঁচু হতে থাকে। একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে।
4. গিরিখাত কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ নদী যখন পার্বত্য অঞ্চলের ঢাল ও পাহাড়সমূহের অবস্থান অনুসারে এঁকেবেঁকে গভীর খাতের সৃষ্টি করে অগ্রসর হয়, নদীখাত তখন অনেকটা ইংরেজি অক্ষর 'V' অথবা 'I' অক্ষরের মতাে রূপ ধারণ করে। এইভাবে পার্বত্য প্রবাহে গিরিখাতের সৃষ্টি হয়। হিমালয়ের পশ্চিম অংশে জম্মু ও কাশ্মীরে নাঙ্গা পর্বতের কাছে সিন্ধুনদের গিরিখাত এবং অরুণাচলের উত্তর-পূর্ব দিকে ব্ৰত্মপুত্রের গিরিখাত বিখ্যাত।
5. ব-দ্বীপ কীভাবে গঠিত হয় ? ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল অবস্থাগুলি কী কী ? সব নদীতে ব-দ্বীপ গঠন হয় না কেন ?
উত্তরঃ সাগরসঙ্গমে ক্রমাগত পলিস্তর জমার ফলে চড়া পড়ে। চড়া ক্রমশ বড়াে হলে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হয়ে যায়। নদী তখন বহুধারায় বিভক্ত হয়ে শাখানদীর সৃষ্টি করে। ওই শাখানদীগুলিও পলি সঞ্চয়ের ফলে রুদ্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মােহনায় মাত্রাহীন ‘ব’ অক্ষরের মতাে ত্রিকোণাকার ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। একে ব-দ্বীপ বলে। গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্রের ব-দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি।
ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল অবস্থাগুলি হল—
(১) নদীপ্রবাহে পর্যাপ্ত পরিমাণে পলি থাকা প্রয়ােজন।
(২) নদী সুদীর্ঘ হওয়া আবশ্যক।
(৩) নদীবিধৌত সমভূমি সুবিস্তৃত হওয়া দরকার।
(৪) সাগর অগভীর হওয়া দরকার।
(৫) নদীমুখ শান্ত থাকা প্রয়ােজন, যাতে পলি সঞ্চিত হতে পারে।
(৬) নদীর গতির বিপরীতমুখী বাতাস প্রবাহিত হওয়া, এতে নদীপ্রবাহ আরও মন্থর হয় এবং সহজেই পলি জমা হতে পারে।
উপরােক্ত অনুকূল অবস্থার অভাব হলে ব-দ্বীপ গঠন হয় না। তাই সব নদীতে ব-দ্বীপ গঠন হয় না।